জেলা রাজ্য

পাহাড়ের অবিরাম বৃষ্টিতে তিস্তা সহ ডুয়ার্সের বিভিন্ন নদীর জল বাড়ছে, বন্যা পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা।


দীপশুভ্র সান্যাল: চিন্তন নিউজ:১৩ জুন,২০২৪:- রাতে টানা বৃষ্টির হয়েছে জলপাইগুড়িতে। বৃহস্পতিবার বিকেলেও আকাশে ঘন মেঘ। হতে পারে ফের বৃষ্টি। জলস্তর বাড়ছে তিস্তার। বাড়ছে ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার পরিমাণও। বুধবার রাত দশটা থেকে টানা বৃষ্টি হয় জলপাইগুড়ি শহরে। এর মধ্যে অবিরাম বৃষ্টিতে সিকিমে নেমেছে ধস। সিকিম পাহাড়ে লাগাতার বৃষ্টির জেরেই তিস্তায় জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে।
সেচ দপ্তরের ফ্লাড কন্ট্রোল রুম জানাচ্ছে, বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায় তিস্তা ব্যারেজে গজলডোবা থেকে জল ছাড়া হয়েছিল ১৬০০ কিউমেক। সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪০০ কিউমেক জল ছাড়া হয়েছে। বেলা ১২টায় সেই ছড়া হয় ৩০০০ কিউমেক জল। ফলে তিস্তার জলস্তর বাড়ছে। তবে তিস্তার ধারের বসতির নিচু এলাকার কিছু বাড়িতে জল ঢুকেছে। তাই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিস্তা পারের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর জলপাইগুড়ির জন্য হলুদ সতর্কতা জারি করে জানিয়েছে যে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে।

গত বছরের ৪ অক্টোবরের সেই ভয়ংকর স্মৃতি আবারও তাড়া করছে তিস্তা এলাকার বাসিন্দাদের। গত কয়েকদিন ধরে উত্তর সিকিমে একটানা প্রবল ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ভয়ংকর রূপ ধারণ করল তিস্তা নদী। সকাল থেকেই ফুল ক্ষেপে উঠেছে তিস্তা আর এতেই ক্রমশ আতঙ্ক বাড়ছে এলাকায়। অন্যদিকে তিস্তা নদীর জল স্তর বেড়ে যাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে তিস্তা বাজার,মল্লি ,রম্বি গেইলখোলা, ২৯ মাইল সহ বিভিন্ন এলাকা। স্থানীয় এলাকাবাসীরা বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। প্রসঙ্গত গত বছরই সেই ঘটনা সম্পূর্ণভাবে কেড়ে নিয়েছিল ওই এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ি ঘর। এরপরই রাজ্য সরকারের তরফে শুধু মিলেছে সামান্য কিছু আর্থিক ক্ষতিপূরণ। তবে আবারো তিস্তা নদীর জলতর বেড়ে যাওয়ায় এলাকাবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক শুরু হয়েছে। অন্যদিকে তিস্তা নদীর জলস্থল বেড়ে যাওয়ায় ওই এলাকা প্লাবিত হওয়ার কারণে বন্ধ রয়েছে কালিম্পং এবং দার্জিলিংগামী সড়ক। এদিকে অতিমাত্রায় জল বৃদ্ধি পাওয়ায় গজল ডোবা তিস্তা ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি, ক্রান্তি এলাকার অসংরক্ষিত এলাকায় মাইক যোগে সচেতন করা হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। মাইকিং করে তিস্তার অসংরক্ষিত এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার বার্তা দেওয়া হচ্ছে। কারণ তিস্তার জল ছাড়া হলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে পাহাড়ি বৃষ্টির কারণে সিকিমে কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সূত্র মারফত অনেকের নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। অনেকের ঘর বাড়ি নদীর জলে ভেসে গিয়েছে বলেও খবর মিলেছে। ফলে পাহাড়ি বৃষ্টির কারণে পাহাড় এলাকা ছাড়াই সমতলেও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

সিকিম

তিস্তার পাশাপাশি বাড়ছে ডুয়ার্সের অন্যান্য নদীর জলের স্তর পাহাড়ে একটানা বৃষ্টির জেরে সমস্ত পাহাড়ী নদীর জল বেড়েছে। আর যে কারণে সমতলেও ফুলেফেঁপে উঠেছে নদীগুলি। ডুয়ার্সের নাগরাকাটা ব্লকের সুখানি নদীর জল বেড়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মনমোহন ধুরা যাওয়ার পথে সেতুর উপর দিয়ে বইছে সুখানি নদীর জল। ওই সেতুর উপর দিয়ে মনমোহন ধুরার মানুষ যাতায়াত করেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ওই সেতুর উপর দিয়ে জল বইতে থাকায় মনমোহন ধুরা গ্রামের সঙ্গে নাগরাকাটা বাজার ও ব্লক অফিসের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ঘুরপথে যাতায়াত করতে হচ্ছে।স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জল না কমা পর্যন্ত যাতায়াত অসম্ভব।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।