চৈতালি নন্দী: চিন্তন নিউজ:২রা নভেম্বর:- চিলিতে উদারবাদী অর্থনীতির বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটলো, গণভোটে বামপন্থীরা পেলো বিপুল জয়। সমাজতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু চিলির। ৭৮% মানুষের রায়ে পতন ঘটলো দক্ষিণপন্থী স্বৈরাচারী সামরিক শাসক অগস্টো পিনোশের। জনগণ সংবিধান সংশোধনের পক্ষে রায় দেয়। মানুষের জোরালো দাবির কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট পিনোশে।
নয়া উদারাবাদী অর্থনীতির ফলে তৈরী হয়েছিল গভীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য। দ্রুত হারে বাড়ছিল দ্রব্যমূল্য, জীবনযাত্রার মান হচ্ছিল নিম্নমুখী। জনগণের অধিকার সঙ্কুচিত হচ্ছিল। কারণ বাজার উন্মুক্ত হবার দরুণ বেসরকারি উদ্যোগ প্রাধান্য পায় ও মার্কিন কোম্পানি গুলির খবরদারি বাড়তে থাকে। গতবছর নভেম্বর মাসে চিলিতে মেট্রোভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ আন্দোলন ক্রমে গণবিদ্রোহের চেহারা নেয়। জনগণের দাবি ছিল বামপন্থী মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে তৈরি হোক নতুন সংবিধান । নতুন সংবিধানে নাগরিকদের সমানাধিকার, বাসস্থান, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করা হোক। বেসরকারীকরণের ধ্বজাধারী পিনোশের পক্ষে তা মেনে নেওয়া সহজ ছিল না। কিন্তু আন্দোলনের চাপে প্রেসিডেন্ট পিনোশে গণভোটের ঘোষণা করেন। গণভোটের মাধ্যমে চিলিতে সমাজতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠা হয়।
আগামী বছর ১১এপ্রিল পুনরায় ভোটগ্রহণের মাধ্যমে চিলির জনগণ ১৫৫ জন সংবিধান কমিটির সদস্যকে নির্বাচিত করবেন এবং ২০২২ সালে ফের ভোটগ্রহণের মাধ্যমে নতুন সংবিধান গৃহীত হবে।
চিলির রাষ্ট্রপতি গণভোটের ফলাফলকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, নতুন পথে দেশের সকলকে একসঙ্গে চলতে হবে। এই গণভোটে দুটি প্রশ্ন রাখা হয়েছিল জনণনের কাছে। প্রথমত, তারা নতুন সংবিধান চায় কিনা ও দ্বিতীয়ত, কি ধরণের অর্থনীতি তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য।
এবার বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর ভূমিকা হবে সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে জনগণের আশা আকাঙ্খাকে অগ্রাধিকার দেওয়া। পৃথিবীর ইতিহাসে এই ঘটনা নজিরবিহীন। কারণ সাধারণত দেখা যায় সরকারে ক্ষমতাসীন দলই পার্লামেন্টে সংবিধান প্রণয়ন করে, যাতে জনমতের সম্পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেনা। পাবলো নেরুদার দেশ চিলিতে একদা বুলেটে ঝাঁঝরা হয়েছিল মার্কসবাদী প্রেসিডেন্ট আলেন্দ সহ বহু বামপন্থী বুদ্ধিজীবীর বুকের পাঁজর। আমেরিকার ষড়যন্ত্রকে ফুৎকারে উড়িয়ে ৭৮%-এর ভোটে চিলি আজ সমাজতন্ত্রের দোরগোড়ায়। কিউবা, ভেনেজুয়েলা, আর্জেন্টিনা, নিকারাগুয়া, মেক্সিকোর পর চিলি…একইসঙ্গে লাতিন আমেরিকায় নতুন করে প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেলো বামপন্থা।