কলমের খোঁচা

লোহা গরম হ্যায়, মারদো হাথোরা


শান্তনু বোস: নিজস্ব প্রতিবেদন:-চিন্তন নিউজ: ১১ই নভেম্বর:– কোভিড১৯ পরিস্থিতি বর্তমান রাজনীতিতে নতুন একটা মেরুকরণ তৈরি করেছে। এই মেরুকরণ কিন্তু জাতি ধর্মের মেরুকরণ নয়। মেহনতী মানুষ আর রাষ্ট্রীয় শোষণ যন্ত্রের মেরুকরণ। জাতি ধর্মের মেরুকরণ হলে বিজেপি তথা এনডিএ বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেতো।

সারাটা বছর জুড়ে প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম গুলোকে দিয়ে লাগাতার ভাবে বিজেপির পক্ষে প্রচার করিয়ে, বিপুল পরিমানে অর্থ বিনিয়োগ করে বিহারের মতো রাজ্যে যে ভাবে নাস্তানাবুদ হল সেটা আর কেউ না বুঝুক অমিত শাহ্ এন্ড কোম্পানি খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে। মুসলিম মৌলবাদী সংগঠনের পরক্ষ সহযোগিতা, সেই সাথে ছিল আরএসএস নামক কুখ্যাত সংগঠনের ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক প্রচার। নীতিশ কুমার, নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ’র মতো হেভী ওয়েট নেতা সম্বলিত এনডিএ জোট, একটা বাচ্চা ছেলে তেজস্বী যাদব আর বামপন্থীদের কাছে এক কথায় ল্যাজেগোবরে হয়ে গেছে।

কংগ্রেস নামক দলটা এই নির্বাচনে সে অর্থে কোনো দায়িত্ব নেয়নি বললেই চলে। আসলে জোট রাজনীতি আর কংগ্রেস দল,এই দু’টো শব্দ এক খাতে বইতে পারে না। নিজেদের ক্ষমতা লিপ্সা ছাড়া এই দলটা আর কিছুই বোঝে না মহাগটবন্ধনের যে ফসল বামপন্থীরা ঘরে তুলেছে, সর্বভারতীয় কংগ্রেস দলের লজ্জিত হওয়া উচিত।

আজকের দিনে এই বিশাল ক্ষমতা সম্পন্ন মিডিয়া আর বিপুল পরিমান অর্থের বিরুদ্ধে বিহার নির্বাচনকে ধর্মীয় করণ থেকে বাঁচিয়ে রাজনীতি করণ করাটাই বামপন্থীদের সাফল্য। এই সাফল্য থেকে শিক্ষা নিয়েই আগামী দিনের রণকৌশল ঠিক করতে হবে। এই লড়াইয়েরই একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ আগামী ২৬ তারিখের সাধারণ ধর্মঘট। এই ধর্মঘটকে প্রতিহত করতে রাষ্ট্র শক্তি যতো আক্রমণ নামিয়ে আনবে, ধর্মঘটের ইস্যু গুলো ততো বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছাবে। এই ধর্মঘট সর্বাত্মক ভাবে জঙ্গি রূপরেখায় জনগণ যদি পালন করে, তাহলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।

অতিমারি পরিস্থিতি মোকাবেলা রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় শাসকদল চুড়ান্ত ভাবে ব্যর্থ। কেন্দ্রের অর্থনৈতিক নীতি সাধারণ মানুষকে ভয়ঙ্কর বিপদের সম্মুখীন করে দিয়েছে। কলকারখানায় উৎপাদন নিম্নমুখী। ব্যপক হারে শ্রমিক ছাঁটাই, কৃষি ক্ষেত্রকে মুনাফাখোরদের হাতে তুলে দেওয়া, অত্যাবস্যকীয় পন্যের আকাশ ছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি, সরকারি সম্পত্তির লাগামহীন বেসরকারীকরণ, এই সব মিলিয়েি বর্তমান রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ তৈরি হয়েছে। একমাত্র সমাজকল্যাণ অর্থনীতিই এখন মানুষের স্বাভাবিক চাহিদাকে পূরন করতে পারে। এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে বৃহত্তর বামপন্থী জোট গড়ে মানুষের ন্যুনতম চাহিদা গুলোকে মূল দাবী করে সর্বাত্মক আন্দোলন দরকার।মানুষ কিন্তু এই আন্দোলনের অপেক্ষায় আছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি বামপন্থীদের অনুকূলে। জোট রাজনীতির সফল পথপ্রদর্শক বামপন্থীরা। বিহারের মতো রাজ্য, যেখানে জাতপাতের রাজনীতিটাই মুখ্য, সেখানে বামপন্থীদের কুড়িটা সিটে জয়। এটা কিন্তু সারা দেশে নতুন সূর্যদয়ের ইঙ্গিত। সময় এসেছে নতুন ইতিহাস রচনা করার। তাই শুধু একটাই কথা মনের মধ্যে ঘুরে ফিরে আসছে, লোহা গরম হ্যায়/ মারদো হাথোরা।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।