মিতা দত্ত, চিন্তন নিউজ, ২২ নভেম্বর: “আমার ভাবনা কিন্তু দূর হইলো না মুরশিদ / আমার ভাবনা কিন্তু দূর হইলো না।” এই গান শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে অনুরণন তোলে। ভাবনা সত্যিই দূর হয়নি। শ্রেণিবৈষম্য সমাজে শ্রমজীবী মানুষের দূর্দশা যাকে তোলপাড় করতো, যার সমস্ত সৃজনশীলতায় মিশে আছে সেই যন্ত্রণা – তিনি আর কেউ নয়, সকলের অতি প্রিয় হেমাঙ্গ বিশ্বাস। কমিউনিস্ট ভাবাদর্শে বিশ্বাসী হেমাঙ্গ বিশ্বাস একদিকে বাঙালী অসমীয়া সংগীতশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, পত্রিকার সম্পাদক। সমাজের নিপীড়িত শ্রেণির সাথে ছিলো তাঁর প্রাণের যোগ।
ব্রিটিশ ভারতে আজ ওপার বাংলায় এক গ্রামে তাঁর জন্ম। ছোটোবেলাটা কেটেছে বিন্নিধানের জমির আলে, মাঠে-ঘাটে। ছোটোবেলায় তাঁর মধ্যে ভালোবাসার বীজ রোপিত হয়েছিলো। ক্রমে তা মহীরূহে পরিণত হয়। বড়ো হওয়ার সাথে সাথে উপলব্ধি করেন বহিরাগত শাসকের অত্যাচার। তাই কিশোর বয়সে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন। পরবর্তীতে সোভিয়েত বিপ্লবের আঁচে যখন ভারতীয় জনগণ তাপিত হয়ে কমিউনিস্ট দল গঠন করেন, তখন সেই তাপে তিনিও তাপিত হন।
তিনি বলেন, আমার গান একার সৃষ্টি নয়, এটা আন্দোলনের সৃষ্টি। আন্দোলন বলতে গণনাট্য আন্দোলন। তাঁরই উদ্যোগে গড়ে ওঠে ভারতীয় গণনাট্য সংঘ। মাটির গানের স্বাদ পায় জনগন।শ্রমজীবি জনগণের দোসর হয়ে ওঠেন তিনি।তেলেঙ্গানা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য তাঁকে জেল খাটতে হয়। “কাস্তেটারে দিও শান” তাঁরই সৃষ্টি – আজও সমান প্রাসঙ্গিক।
ব্রিটিশ শাসনের শুরুতেই নানাবিধ কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয় – অন্যতম সাঁওতাল বিদ্রোহ। তিনি তাঁর গানের মাধ্যমে সেই বিদ্রোহের জয়যাত্রা গেয়ে গেছেন। কৃতাকলাকেন্দ্র এই অমরপ্রাণের শরীরী মৃত্যুর দিনে শ্রদ্ধার্ঘ্যের মধ্য দিয়ে তাঁকে ও সাঁওতাল বিদ্রোহকে স্মরণ।