রাজ্য

গঙ্গা দূষণে প্রতিমা বিসর্জনের ভূমিকায় চিন্তিত পরিবেশবিদরা।


বিশেষ প্রতিবেদন, চিন্তন নিউজ, কল্পনা গুপ্ত, ১৮ অক্টোবর, ২০২১ – পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য থেকে ৪৮℅ অপরিশোধিত জল গঙ্গা অববাহিকায় সবসময় যুক্ত হচ্ছে। এর মাত্র ৪২℅ জল পরিশোধন করতে পারছে । হিমালয় থেকে উৎপত্তি হয়ে গঙ্গা প্রায় ২৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এই রাজ্যে প্রবেশ করেছে। সবচেয়ে জনাকীর্ণ অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে চলে গঙ্গা এইসব অঞ্চলের প্রায় অর্ধ বিলিয়ান মানুষের বর্জ্য নিজের মধ্যে ধারণ করে আছে। ভারতের কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের মতে , এই বিপুল পরিমাণ বর্জ্যের মাত্র ১০℅ পরিশোধন করা সম্ভব হয়।

গঙ্গাদূষণের বেশীরভাগ অংশই আসে মানুষের উৎপাদিত বর্জ্য থেকে, কৃষি, শিল্প কারখানা থেকে। ভারতের বিশেষত উত্তর ভারতের গংগা তীরবর্তী যে রাজ্যগুলি রয়েছে সেখানে দুর্গোৎসবে তৈরি প্রতিমা প্রচুর পরিমানে গংগাগ ভাসান দেওয়া হয়। এরফলে গঙ্গাদূষণের মাত্রা আরো বেড়ে গেছে। প্রতিমা তৈরির মূল উপাদান মাটি জমতে থাকে নদী গর্ভে। এছাড়াও প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহৃত হয় রং, সাজসরঞ্জামের উপাদান ইত্যাদি।

বিসর্জনের জেরে গঙ্গা দূষণ রুখতে ‘ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গংগা’ বা এন এম সি জি র একটি নির্দেশিকায় আছে গংগা বা তার উপনদীতে প্রতিমা বিসর্জন না দেওয়ার নির্দেশ। বিসর্জনের কারণে নদীতে দূষণ ঘটলে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার সুপারিশও আছে এই নির্দেশিকায়। গাঙ্গেয় অববাহিকার ১১ টি রাজ্যেই নির্দেশিকা পৌঁছে গিয়েছে। কোন নির্দিষ্ট জলাশয়ে প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা ছিলো একসময়ে, কিন্তু তাতেও জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবন বিপন্ন হতো। নৈহাটীতে হোসপাইপের সাহায্যে প্রতিমা গলিয়ে দেবার উপমাও আছে কিন্তু তাতে অপচয় হয় জলের আর মাটিগুলো ধুইয়ে নদীতেই ফিরে যায়। পরিবেশকর্মী বিশ্বজিত মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘ প্রতিমা গংগায় ফেলে তুলে নিলেও রং থেকে নানা দূষণ হয়। তাই এর থেকে ভালো গংগায় ছোট ঘটটুকু বিসর্জন দিয়ে প্রতিমা অন্যত্র জমা করে তা গলানো যেতে পারে। সেটাই বিজ্ঞান সম্মত।’

রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রক বোর্ড জানিয়েছে, দুর্গাপূজা, লক্ষ্মীপূজা ইত্যাদি বিসর্জন সংক্রান্ত কাজটি গংগার বদলে উত্তর কলকাতার পুকুরে করতে হবে। বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ দ্যটি পুকুরকে তৈরি রাখা হয়েছে প্রতিমা বিসর্জনেরজিন্য। একটি লেকটাউনের দেবীঘাট, অন্যটি দমদমের চার নম্বর ট্যাঙ্ক।

নদীতে ভাসান রুখতে দুবছর আগে মামলা করেছিলেন বিজ্ঞানী অম্বরনাথ সেনগুপ্ত। এরই প্রেক্ষিতে গঙ্গায় ভাসান দেওয়া নিয়ে নির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করতে জাতীয় পরিবেশ আদালত রাজ্যকে নির্দেশও দিয়েছিলো। কিন্তু সে নির্দেশিকা মানা হচ্ছে না বলে দাবি পরিবেশবিদদের। ভাসান হয়েই যাচ্ছে নদীতে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, প্রতিমায় যে রঙ করা হয় তাতে ক্রোমিয়াম, সীসা সহ ক্ষতিকারক পদার্থ থাকে যা জলজ প্রানী ও উদ্ভিদের ক্ষতি করে। এলাহাবাদের গঙ্গায় প্রতিমা নিরঞ্জন সম্পূর্ণ বন্ধ। সুভাষ বলেন, গঙ্গা যেসব রজ্যের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তাদের সবেরই ভাসানের ক্ষেত্রে অভিন্ন নীতি হওয়া উচিৎ। অন্য রাজ্য যা পারছে পপশ্চিমবঙ্গ বা কলকাতা তা পারবে না কেন – এই প্রশ্ন মনে দানা বাঁধছে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।