রাজনৈতিক

করোনা মহামারীর সময় অসহায় মানুষের সান্তাক্লজ ‘সাত পার্সেন্ট’ দলের কর্মীবৃন্দ


দিলীপ গাঙ্গুলি:চিন্তন নিউজ:৮ই এপ্রিল:-এই রাজ্যে ভোটের নিরিখে মাত্র সাত পার্সেন্ট। সারা দেশে সংখ্যাটা আরো কম। চুরির টাকার ভান্ডার নেই, নেই অর্থবল, নেই জনবল। সম্বল বলতে শ্রেষ্ঠ ভিক্ষার অনাথপিন্ডদ এর মতো ভিক্ষা ঝুলি নিয়ে কৌটো নাড়িয়ে সামান্য কিছু অর্থের সংস্থান আর অদম্য মনবল।

এই কঠিন সময়ে সিপিআইএম দলের ছাত্র যুবরা মাত্র এইটুকু পুঁজি নিয়েই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সারা রাজ্যে। সাধারণ মানুষের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে মাত্র কয়েক ঘন্টার প্রচেষ্টায় কয়েকশো হাত তৈরি করে ফেললো কয়েক হাজার মাক্স থেকে স্যানিটাইজার। মানুষের জন্য দায়বদ্ধ এরা। আর দায়বদ্ধ বলেই ১০০ নাম্বারে ডায়াল করলেই পুলিশ থেকে প্রশাসনের লোক জনেরা দিয়ে দিয়েছেন এদের ফোন নাম্বার। ও প্রান্ত থেকে উৎকন্ঠা নিয়ে ফোনের পর ফোন আসছে আর অসহায় মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে খাবার থেকে জীবনদায়ী ঔষুধ।

লক ডাউনের ফলে সুদূর তামিলনাড়ুতে আটকে থাকা পুরুলিয়ার পরিযায়ী শ্রমিকের একটি দল যখন কোনোমতে বেঁচে থাকার জন্য একমুঠো অন্নের আশায় হাহাকার করে, তখন তাদের কান্না ভেজা চোখের জল মুছে দিতে এগিয়ে আসেনি শাসক দলের কোনো মন্ত্রী অথবা এই রাজ্যে ১৮ টা সিট পাওয়া কেন্দ্রের শাসকদলের কোনো এম পির হাত । এগিয়ে এলো সেই সাত পার্সেন্ট দলের হেরে যাওয়া জনদরদি নেতা বাসুদেব আচারিয়া, ওখানকার সিটু নেতাদের সহায়তায় খাবার পোঁছে গেল অভুক্ত শ্রমিকদের কাছে। করোনার ভয়ে যখন এরাজ্যের দাপটে ক্ষমতাশালী সব নেতাই যখন ঘরের ভিতরে গৃহিনীর আঁচলের তলায় আশ্রয় নিয়েছে, তখন মাত্র সাত পার্সেন্ট পাওয়া সি পি আই এম দলের কর্মী রানাপ্রতাপ, রানারের মতো শহরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত ছুটে চলেছে তার চৈতক নিয়ে, সেচ্ছায় শহরের মানুষের দরজায় পোঁছে দিচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে ঔষুধ পত্র।

না, না মেবারের মহা রানা প্রতাপের কথা হচ্ছে না, কথা হচ্ছে আসানসোলের মহারানা, রানাপ্রতাপ সেনের কথা বলছি। অথবা পুরুলিয়ার ইন্দ্রবিলের যুবনেতা সোমনাথ দূবে,যে ফেসবুকে কে একজন পোস্ট করল ঔষুধের অভাবের কথা, কয়েক ঘন্টার মধ্যে সোমনাথ দূবের প্রচেষ্টায় যুবকর্মীদের মাধ্যমে ১০০ কিলোমিটার দূরে তুলিনের বাড়িতে থাকা সেই অসহায় মানুষটির বাড়িতে পোঁছে গেলো ঔষুধ।

আবার বিহারের মুঙ্গের থেকে এরাজ্যের গড়বেতার একটি হিমঘরে কাজ করতে আসা ৩১ জনের একটা পরিযায়ী শ্রমিকের দল যখন পুলিশের তাড়া খেতে খেতে একবার পুরুলিয়া জেলা, একবার বাঁকুড়া জেলার বডার এপার ওপার করতে করতে যখন দিশেহারা, ঠিক সেই সময় খবর পেয়ে পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলে তাদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা যারা করে দিলেন তারা আর কেউ না এই সাত পার্সেন্ট ভোট পাওয়া দলেরই কিছু কর্মী।

আসলে সাত পার্সেন্ট কি সত্তর পার্সেন্ট, ক্ষমতায় থাকা, কি নাথাকার উপরে এগুলো নির্ভর করে না, নির্ভর করে সদিচ্ছার উপর। আসলে সোমনাথ বা রানাপ্রতাপ এগুলো এক একটা নাম মাত্র, এরাজ্যে তো বটেই সারা দেশে এরকম হাজারো সোমনাথ এবং রানাপ্রতাপের চোখে ঘুম নেই। এরা ছুটছে ছুটছে ছুটেই চলেছে বিরাম হীন ক্লান্তিহীন ভাবে। এদের রক্তের জোগানেই পুষ্ট হয় ভারতবর্ষের ব্লাড ব্যাঙ্ক, এদের উষ্ণ রক্তের স্রোতে হৃদপিন্ডের গতি সঞ্চারিত করে মৃত্যুপথযাত্রী কোনো সহনাগরিকের।

এদেরকে মুছে ফেলা এতোটা সহজ না। এদেরকে মুছে ফেলতে গেলে মানবতা মুখ থুবড়ে পড়ে। ইতিহাস থমকে দাঁড়ায়। সরকার নয়, প্রশাসন নয়, এই এপ্রিলের উত্তপ্ত গরমে সান্টাক্লজ হয়ে দেখা দিচ্ছে এই সাত পার্সেন্ট দলের কর্মীরাই। ঝোলা উপড় করে বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিচ্ছে খাবার। ভোট নয়, রাজনীতি নয় শুধুমাত্র অভুক্ত পানসে হয়ে যাওয়া মানুষ গুলোর মুখে হাসি ফুটুক এটাই এদের কাম্য। এরা স্বপ্ন দেখতে জানে, এরা স্বপ্ন দেখে একদিন এদের হাসিতে ভারতবর্ষ মুখরিত হবে। এদের সংখ্যাটা কমে যেতে পারে কিন্তু মুছেফেলা যায় না। এরা মুছে গেলে মানবতা মুখ থুবড়ে পড়ে, ইতিহাস থমকে দাঁড়ায় ।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।