কল্পনা গুপ্ত: চিন্তন নিউজ:২০শে আগস্ট:- ইন্ডিয়ান এসোশিয়েশন ফর দি কালটিভেশন অফ সায়ান্সের প্রতিষ্ঠাতা এবং কলকাতা মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় এম ডি স্নাতক ড. মহেন্দ্রলাল সরকার যাঁর অন্তহীন উৎসাহে বাংলা তথা ভারতে ভারতীয়দের বিজ্ঞান চর্চার দ্বার উন্মোচিত হয়েছিলো। আজ জাতীয় বিজ্ঞান মনস্ক দিবসে চিন্তনের পক্ষ থেকে তাঁকে জানাই অকুন্ঠ কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা। তাঁর বহুল কর্মবহুল জীবনের সংক্ষিপ্ত চিত্র দেবার প্রচেষ্টা করছি স্বল্প পরিসরে । বর্তমান প্রজন্ম তাঁর কথা বড় একটা জানেনা।
কোন বৃক্ষের গোঁড়ায় জল সিঞ্চন না করলে সে যেমন সতেজ থাকে না তেমনি এইসকল দূরদর্শী, কৃতি বিজ্ঞান পথিকৃতের জীবন সম্বন্ধে না জানলেও সেরূপ আগামী প্রজন্মের জ্ঞান সম্পূর্ণ হয় না।
তাঁর জীবনকে এখানে দুটি ভাগে দেখবো, একটি তাঁর শৈশব অপরটি তাঁর সামাজিক অবদান। মহেন্দ্রলাল সরকার ১৮৩৩ এর ২ রা নভেম্বর জন্মান হাওড়া জেলার পাইকপাড়ায়। তাঁর বাবা মারা যান তাঁর ৫ বছর বয়সে। এরপর তাঁর মা তাঁকে নিয়ে চলে যান মাতুলালয়ে। সেখানে তাঁর ৯ বছর বয়েসে মা গত হন। তিনি বড় হয়ে ওঠেন মামাবাড়িতে মামার তত্ত্বাবধানে। ১৮৪০ এ ফ্রি ছাত্র হিসাবে ভর্তি হন হেয়ার স্কুলে। ১৮৪৯ এ জুনিয়র স্কলারশিপ নিয়ে উত্তীর্ণ হন। ১৮৫৪ সালে যখন হিন্দু কলেজে ভর্তি হন তখন সেখানে বিজ্ঞান বিষয়ক পড়াশোনার ব্যবস্থা ছিলো না। ফলে তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়ার জন্য স্থানান্তরিত হন। তিনি যখন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তখন অধ্যাপকরা তাঁর শিক্ষার উৎকর্ষতা দেখে ছাত্রদের সামনে ‘অপটিক’ বিষয়ে কয়েকটি ক্রমাগত বক্তৃতার ব্যবস্থা করবন যা তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করেন। বিভিন্ন প্রকার স্কলারশিপ সহ তিনি ১৮৬০ তিনি ডাক্তারী পরীক্ষায় সর্বোচ্চ সম্মানে উত্তীর্ণ হন। ১৮৬২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম এম ডি হন চন্দ্রকুমার দে। ১৮৬৩ সালে ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার ও ডা. জগবন্ধু বোস দুজনে দ্বিতীয় এম ডি হন।
১৮৬৭ সাল থেকে ডা. সরকার ভারতীয়দের নিজস্ব ধারায় বিজ্ঞান চর্চার জন্য জাতীয় বিজ্ঞান পরিষদ গঠনের প্রচেষ্টা শুরু করেন। ১৮৭৬ এ ইন্ডিয়ান এসোশিয়েশন ফর দি কালটিভেশন অফ সায়েন্স গঠন করেন ও তার প্রথম সম্পাদক হন।সেখানে পদার্থ বিদ্যা, রসায়ন, ভূবিদ্যা, গণিত বিষয়ক চর্চা হতো এবং এই সংস্থায় অনেক বিখ্যাত ভারতীয় বিজ্ঞানী যুক্ত ছিলেন।
এছাড়াও ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার উনবিংশ শতাব্দীতে নারীশিক্ষা প্রসার কার্যের ছিলেন এক মহান পৃষ্ঠপোষক। কলকাতা মেডিকেল কলেজে তখন মেয়েদের পড়ার সুযোগ না থাকায় তিনি অবলা বসুকে মাদ্রাজ মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়ার ব্যবস্থা করে দেন। ১৯০৪ এর ২৩ শে ফেব্রুয়ারিতে এই মহাজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। বিজ্ঞান চর্চার প্রবাদপ্রতিম পুরুষ ডা.মহেন্দ্রলাল সরকার ছিলেন যতমত ততপথের পথপ্রদর্শক ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের প্রাণপুরুষ রামকৃষ্ণদেবের চিকিৎসক। তাঁকে শ্রীরামকৃষ্ণ অত্যন্ত স্নেহ করতেন ও তাঁর চিকিৎসার প্রতি আস্থাভাজন ছিলেন।
ডা. মহেন্দ্রলাল সরকারের ভারতে প্রথম জাতীয় বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় অবদান তাঁকে কালিজয়ী করে আমাদের হৃদয়ের মনিকোঠায় একান্ত আপনজন করে রেখেছে। তাঁর জীবনচর্চা যেন আজকের প্রজন্মকে উদবুদ্ধ করে, তবেই আসবে সার্থকতা।