চৈতালি নন্দী: চিন্তন নিউজ:২রা আগস্ট:– থাইল্যান্ডে রাজার জন্মদিন মহাসমারোহ ও আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে পালনের সঙ্গে সঙ্গেই জোরালো হচ্ছে রাজতন্ত্র অবসানের দাবী। এই অনুষ্ঠান যখন পালিত হচ্ছে তখন রাজা মহাভিজিরালোংকর্ন ছিলেন মহামারী সংকট থেকে অনেক দূরে জার্মানির বাভেরিয়ার এক বিলাসবহুল হোটেলে নিরাপদ ও সুরক্ষার ঘেরাটোপে।
২০১৪ সালে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর মনে করা হয়েছিল গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে দেশে। কিন্তু সেখানে রাজপরিবারের ছড়ি ঘোরানোর সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীর অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ ঘটে শাসনব্যবস্থায়। হতাশাগ্রস্ত যুবসমাজের ক্ষোভের বিষ্ফোরণ ঘটতে থাকে। থাইল্যান্ডের রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করা বা বিরূপ মন্তব্য করাও এখানে দন্ডনীয় অপরাধ। হতে পারে ৩ থেকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড। পরিস্থিতি এমন এ্যাক্টিভিস্ট টিয়াগন উইদিটন সরকারের সমালোচনা করে “আমি রাজতন্ত্রের উপর বিশ্বাস হারিয়েছি” লেখা টিশার্ট পড়ে ফেসবুকে ফটো পোস্ট করার ফলে শাস্তি হিসেবে তাকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হতাশ যুবসমাজ, করোনাবিধি ভেঙে ৩০০০ প্রতিবাদী জড়ো হয় ব্যাঙ্ককের ডেমোক্রেসি মনুমেন্টের সামনে। তারা দাবি করে পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হবে, নতুন করে লিখতে হবে সংবিধান। সমাজকর্মী ও প্রতিবাদীদের উপর চলবেনা কোনো দমননীতি, ইস্তফা দিতে হবে নির্বাচিত না হয়েও সেনাবাহিনীর মদতে প্রতিষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রী চান -ও -চাকে। গোটা সপ্তাহ ধরেই চলছে বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রতিবাদ, যা ছড়িয়ে পড়ছে শহর থেকে গ্রামে। দেশে জারি হয়েছে জরুরি অবস্থা।
অন্যদিকে জার্মানিতে রাজা যেখানে সুরক্ষিত বিশ্রাম করছেন, সেখানেও থাই নাগরিকরা প্রতিবাদ সমাবেশ করছে বার্লিনের ব্রান্ডেনবুর্গ গেটের সামনে, স্লোগান উঠছে
“আমাদের লক্ষ্য রাজতন্ত্রের অবসান”। যুবসমাজ চাইছে এমন কোনো দল ক্ষমতায় আসুক যারা গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে দেশে। ২০১৯ সালের ভোটে ক্ষমতা ফেরাতে চেয়েছিল বিজয়ী দল। কিন্তু সেনা রচিত সংবিধান সে দলের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছে। তার বদলে ক্ষমতায় এনেছে তাদের, যাদের উপর তাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। ফলে নির্বাচিত না হয়েও প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন প্রযুত। যিনি দেশের জন্যে কিছুই করেননি, অর্থনীতি কে সমৃদ্ধ করেননি, স্বেচ্ছাচারী চিন্তাভাবনা চাপিয়ে চলেছেন সাধারণ মানুষের উপর, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছেন। এরা ক্ষমতা ভোগ করছে বংশপরম্পরায়। ক্ষোভের প্রকাশ ঘটছে রাজার বিরুদ্ধেও, রাজার বিরুদ্ধাচরণ দন্ডনীয় অপরাধ জেনেও। প্রতিবাদীদের উপর নেমে আসছে শাস্তির খাঁড়া।
বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবী তুলেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। মহামারী নিয়ে সরকারের পদক্ষেপ ও রাজতন্ত্রের সমালোচনা মূলক যে কোনো আচরণের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে থাইল্যান্ড। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন আ্যামনেস্টি ইনটারন্যাশনলও এর সত্যতা স্বীকার করেছে।