বিশেষ প্রতিবেদন, চিন্তন নিউজ, কল্পনা গুপ্ত, ২৭ শে আগষ্ট, ২০২১ – বাংলাদেশের খুলনা জেলার দিঘলিয়ার দিয়াড়া গ্রামের মানুষের কাছে ১৯৭১ সালের ২৭ শে আগষ্ট একটা কালা দিবস রূপে এসেছিল। পাক মদত পুষ্ট রাজাকার বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি নৃশংসতার বর্বর স্বাক্ষর রেখে গিয়েছিলো ইতিহাসের পাতায়।
একটু পিছিয়ে যাওয়া যাক ৫০ বছর আগের আজকের তারিখে। কি ঘটেছিলো তা জানা গেল স্থানীয় মানুষের কথা থেকে। মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবদার রহমান ও তাঁর সঙ্গীরা সেই সময়ে দিঘলিয়ার দিয়াড়া গ্রামে অবস্থান করছিলেন। খবরটা চলে যায় পাক হানাদার রাজাকার বাহিনীর কাছে। ১৯৭১ এর ২৭ শে আগষ্ট খুব সকালবেলায়ই কয়েকশো রাজাকার সেনা এই গ্রামটি ঘিরে ফেলে। তারা ছাত্রনেতা মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবদার রহমানের তল্লাশ করতে থাকে কিন্তু গ্রামের কোন মানুষ আবদারের সন্ধান দেন না। রাজাকার সেনারা ডা. মতিয়ার রহমান সহ ৬০ জন গ্রামবাসীকে ধরে নিয়ে যায়। সকাল ৯ টার সময়ে প্রকাশ্য দিনের আলোয় তাদের কাউকে গুলি করে, কাউকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করে। ২২ জনের মৃতদেহকে রাজাকার সেনারা ভৈরব নদের জলে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। বাকি দেহগুলি মাটি চাপা দেওয়া হয়। এই ৬১ জনের মধ্যে আশ্চর্যজনকভাবে সৈয়দ আবুল বাসার দেহে ১৯ টি জায়গায় ধারালো অস্ত্রের কোপ নিয়েও বেঁচে যান। সেনারা তাকে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায়। পরে তার কিশোর পুত্র এসে দেখে বাবার প্রাণ স্পন্দিত হচ্ছে। তাকে লুকিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। উনি সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও লুকিয়ে লুকিয়ে থাকতেন।
এক মুক্তিযোদ্ধার জীবন বাঁচানোর জন্য সারা গ্রামের এতজন মানুষের আত্মোৎসর্গকে শহীদ সম্মানে সম্মানিত করা ও তাঁদের স্বাধীনতা যুদ্ধের শরিক রূপে স্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যে ‘৭১ এর ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি ‘ ‘৭১ গণহত্যা অর্কাইভ ও জাদুঘরে কয়েক বছর ধরে দিনটিকে ‘ একাত্তরের দিয়াড়া গণহত্যা দিবস ‘ হিসাবে পালিত হচ্ছে।যুবলীগ দিঘলিয়া উপজেলা শাখার নেতা ও দিঘলিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি জানান – ১৯৭১ সালের ২৭ শে আগষ্ট দিয়াড়ায় গণহত্যার ঘটনা ঘটে। সেই শহীদদের স্মৃতিরক্ষায় উদ্ধার হওয়া মানব অস্থিসমূহ সংরক্ষণ করা হয়েছে ‘৭১ গণহত্যা নির্যাতন অর্কাইভ ও জাদুঘরে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা স্বজন সম্পদ হারিয়েছেন তাদের দুঃখ যন্ত্রণা ভুলে যাওয়া যায় না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এইরকম অসংখ্য হত্যাকান্ড ঘটেছিলো। অনেক প্রাণের বিনিময়ে, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত তাদের স্বাধীনতা। আজকের এই দিনে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হচ্ছে দিয়াড়া গণহত্যার শিকার সকল শহীদকে। খুলনা ও দেয়াড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি চিন্তন শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে।