রাজ্য

বোরোলি, দারাঙ্গি সহ বিভিন্ন প্রজাতির নদীয়ালি মাছের মড়ক তিস্তায় ভেসে উঠছে মরা মাছ।


দীপশুভ্র সান্যাল, চিন্তন নিউজ:- জলপাইগুড়ি,১ নভেম্বর- মরা মাছ ভেসে উঠছে তিস্তায়
জলপাইগুড়ি’র তিস্তায় মাছের মড়ক, নড়েচড়ে বসল মৎস্য দফতর। জানা গেছে এই সময়ে আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে জলে অক্সিজেন মাত্রা কমে গিয়ে নদীয়ালী ছোট মাছ মৃত অবস্থায় ভেসে ওঠার সম্ভবনা রয়েছে। তবে এই ক্ষেত্রে কি হয়েছে তা জানতে মৃত মাছ, জল ও মাটি’র নমুনা পরীক্ষার জন্য কলকাতার কেন্দ্রীয় ল্যাবে পাঠানো হয়েছে বলে জানাল মৎস্য দফতর। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত সর্তকতা হিসেবে তিস্তা সেতু থেকে মণ্ডলঘাট পর্যন্ত প্রায় দশ কিলোমিটার তিস্তায় মাছ না ধরার পরামর্শ মৎস্য দফতরের। মৎস্যজীবী ও স্থানীয়দের সচেতন করা হচ্ছে বলে দাবি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ২০১৮ সালে জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন তিস্তা নদীতে মাছের মড়ক লক্ষ্য করা যায়। আবার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে রবিবার সকালে প্রথম জলপাইগুড়ি জেলাশাসকের দপ্তর সংলগ্ন জুবলি পার্ক এলাকার ১ নম্বর স্পারের পাশে তিস্তায় বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য নদীয়ালী মাছ মৃত অবস্থায় ভেসে উঠতে দেখা যায়। সেই মাছ সংগ্রহ করেন স্থানীয়রা। কিন্তু মাছের মড়কের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই আতঙ্ক ছড়ায় তিস্তা পাড়ে। ৪ অক্টোবর সিকিমের বন্যার সময় সেনার অন্ত্র ভাণ্ডার ও বিভিন্ন রাসায়নিক তিস্তায় ভেসে আসে। ভেসে আসা রাসায়নিক থেকে কি মাছের মড়ক ধন্দে গ্রামবাসী। সোমবারও মৃত মাছ সংগ্রহ করে অনেকে। মৎস্য দফতরের দাবি, প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে জলে অক্সিজেনের মাত্রা কমছিল। এই কারণে নদীয়ালী শুধুমাত্র ছোট প্রজাতির মাছের মড়ক হয়। এদিকে তিস্তায় কীটনাশক কিংবা ব্যাটারি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে শর্ট দিয়ে মাছ স্বীকারের এখনও কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা শ্যামল মণ্ডল জানান, মাছের মড়ক কি কারণে বোঝা যাচ্ছে না। তবে আমাদের অনুমান বন্যার ভেসে আসা কোন রাসায়নিক থেকে এমনটা হতে পারে। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যা কুসুম মণ্ডল বলেন,সবাইকে মৃত ভেসে ওঠা মাছ সংগ্রহ ও খেতে বারণ করা হচ্ছে। প্রচার চলছে করা হচ্ছে মাইকিং। এদিকে মৎস্য দফতরের আধিকারিক সুমন সাহা জানান ,প্রাথমিক ভাবে তিস্তায় কীটনাশক প্রয়োগের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ভোরের দিকে জলে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায় অনেক সময়, এই কারণে এমনটা হতে পারে। বিভিন্ন নমুনা ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে, রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত সর্তক থাকতে তিস্তায় মাছ না ধরতে বলা হয়েছে।

শরতের শেষে শীতের শুরুতে এই সময় প্রতি বছর তিস্তায় বরলী মাছ থেকে শুরু করে বাটা বোয়াল আর সহ বিভিন্ন নদীয়ালি সুস্বাদু মাছ ধরেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা । স্থানীয় মৎস্যজীবী দিপু রায় জানালেন ৪ ঠা অক্টোবর বন্যার পরের দিন তিস্তায় বহু মাছ ভেসে ওঠে অনেক মাছের মৃত্যুও হয় তিস্তা পাড়ের বিভিন্ন বাঁধের সামনের জলে। বুধবার সকালেও বিভিন্ন প্রজাতির মরা মাছ নদীতে ভেসে ওঠায় চিন্তিত মৎস্যজীবীরা এই সময়ের সোনালী ফসল তিস্তার বিখ্যাত বোরোলি মিলছে না নদীর কোনখানে। নদীয়ালি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মরে ভেসে উঠছে জলে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে চার তারিখ বন্যায় ভেসে আসা মরা মাছ খেয়ে তিস্তা পাড়ের বহু মানুষের পেটের সমস্যা হয়েছিল। তারপর থেকে ওই মাছ কেউ খাচ্ছেন না তোলাও হচ্ছেনা মরা মাছ। বিষক্রিয়ার জেরে এই ঘটনা বলে তিস্তা পাড়ের বাসিন্দাদে অনুমান। তবে এই সময় জলে ভেসে ওঠা মাছ সংগ্রহ করতে ব্যস্ত তিস্তা পারের অতি উৎসাহী বাসিন্দারা। ঘটনার খবর পেয়ে তিস্তার জল ও মাটি পরীক্ষার জন্য ঘটনাস্থলে পৌঁছয় মৎস্য দফতরের প্রতিনিধিরা, জলে ভেসে ওঠা মাছ না খাওয়ার জন্য প্রচার চলছে।

গত ৪ অক্টোবর সিকিম পাহাড়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে কেন্দ্র করে তিস্তায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হয়। সেই সময় পাহাড় থেকে তিস্তার জলে ভেসে আসে সেনা বাহিনীর অস্ত্রভাণ্ডার সহ বিভিন্ন সামগ্রী। এরপর তিস্তার চর এলাকায় সেনা ও পুলিশের যৌথ সার্চ অপারেশনে কিছুটা বিপদমুক্ত হলেও এখনও পুরোপুরি বিপদ কাটেনি তিস্তার চরে বলে দাবি। এরই মধ্যে এবার জলপাইগুড়ি’র জুবলি পার্ক লাগোয়ো তিস্তার এক নম্বর স্পারের সামনে তিস্তা নদীতে মাছের মড়কের ঘটনা, নতুন করে উদ্বেগ ছড়িছে এলাকায়। বন্যার ভেসে আসা কোন রাসায়নিক থেকেও জল দুষণের সম্ভবনা হতে পারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না এলাকাবাসী। এদিকে তিস্তার জলে ভেসে ওঠা মৃত মাছ সংগ্রহ করার হিড়িক লক্ষ্য করা গেল। নদীতে নেমে মাছ সংগ্রহ করতে ব্যস্ত তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা। বোরোলি, দারাঙ্গি সহ বিভিন্ন প্রজাতির নদীয়ালী মাছের মড়ক লেগেছে। তিস্তা পারের বাসিন্দা রতন মল্লিক জানান সকালে আমি দেখলাম কোন মাছ জলে ভেসে উঠছে, আবার কোন মাছ জলেই ছটপট করছে। এই মাছ খেতে বারণ করা হচ্ছে। কিন্তু শুনছেন না অনেকে। দুই-তিন কেজি করে মাছ সংগ্রহ করে বাড়ি নিয়ে গিয়েছেন অনেকে। মাছ সংগ্রহ করতে আসা তিস্তা পাড়ের বাসিন্দা গোপাল কীর্তনীয়া বলেন,এত মাছ ভেসে উঠছে এই কারণে ধরলাম। কেন এত মাছ ভেসে উঠল জানা নেই। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যা কুসুম মণ্ডল বলেন, “কিভাবে এত মাছের মৃত্যু হল জানা নেই। এই মাছ খেতে না বলা হচ্ছে বাসিন্দাদের।” এদিকে মৎস্য দফতরের আধিকারিক সুমন সাহা বলেন,খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁচ্ছে গিয়েছি আমরা। জল, মাটির নমুনা ও মৃত মাছ সংগ্রহ করা হয়েছে পরীক্ষার জন্য। তবে প্রাথমিক পরীক্ষায় দেখা গেল জলে অক্সিজেনের মাত্রা কম। কেন এমনটা হল, নমুনা ল্যাবে পাঠিয়ে পরীক্ষার পর পরিস্কার জানা যাবে। এই মাছ না খেতে বলা হচ্ছে সবাইকে। স্থানীয় মৎস্যজীবীদের বক্তব্য এই সময় নদীয়ালি মাছ সংগ্রহ করে ভালো অর্থ উপার্জন হয় তাদের কিন্তু ৪ ঠা অক্টোবরের বন্যার পর থেকে প্রশাসন নদীতে নামতে বারণ করেছে পেটের দায়ে তারা বন্যার সময় নদীতে ভেসে ওঠা আশা কাঠ বিক্রি করেই সংসার চালাচ্ছেন। নদীতে মিলছে বিভিন্ন অস্ত্র ভেসে এসেছে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, পাহাড়ে ভেসে গিয়েছে বহু গাড়ি সহ অনেক জিনিস। এখনো তিস্তার জল ঘোলা নদীতে রাসায়নিক বিক্রিয়ার সম্ভবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না পরিবেশ প্রেমীরা। করলায় এখনো মিলছে ছোট মাছ কিন্তু তিস্তায় মাছ না মেলায় চিন্তায় মৎস্যজীবীরা তবে কি তিস্তা থেকে হারিয়ে যাবে সুস্বাদু বোরোলি, দারাংগি, আর, বোয়াল তিস্তার বাটা ?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।