সীমা বিশ্বাস, আসাম: চিন্তন নিউজ:১৫ই আগস্ট:— অবশেষে অসম বিধান সভার বাজেট অধিবেশনের অন্তিম দিনে অর্থাৎ ১৪ আগষ্ট গো-সুরক্ষা বিল গৃহীত হয়। বহু বিতর্কিত গো- সুরক্ষা বিল কংগ্রেস,এআই ইউ ডি এফ এবং, সি পি আই এম এর তীব্র বিরোধিতার পর ও শাসক দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা র জোরে ধ্বনি ভোটে গৃহীত হয় । বিধান সভায় বিবেচনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এই বিল উত্থাপন করেছিলন। কংগ্রেস এআই ইউ ডি এফ এবং সিপিআই এম সর্বমোট ৭৬টা সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করে এবং আইনে পরিণত হবার আগে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর পরামর্শ দেয়। সিপিআইএম অসম রাজ্য কমিটি গত ১২ জুলাই উত্থাপন করা অসম গো-সংরক্ষণ বিল ২০২১ আর্থিক ভাবে অত্যন্ত ক্ষতিকারক এবং সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে অভিহিত করে।এই বিল ব্যাপক দুনীর্তি এবং পুলিশ প্রশাসনের আক্রোশমুলক কর্মকাণ্ডের পথ প্রশস্ত করবে বলে দল মনে করে।
সাম্প্রতিক রাজনীতির লাভজনক বিষয় গো হত্যার ক্ষেত্রে ধর্মের বাধ্য-বাধকতার অজুহাত দিয়ে বিজেপি সরকার রাজ্যের অর্থনীতিতে বিপর্যয় নামিয়ে আনতে চাচ্ছে। ফলস্বরূপ লক্ষ লক্ষ গরীব জণসাধারণ বিশেষ করে হিন্দু ধর্মীয় জণসাধারণের জীবণে দুঃখ যন্ত্রণা বৃদ্ধি পাবে।এই গো-হত্যা নিষিদ্ধ করণের দ্বারা বহু লোক দারিদ্র্য সীমা রেখার নীচে নেমে যাবে।
বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যে কৃষি কর্মে গরুর ব্যবহার কমে গেছে। কিন্তু গত এক দশকে ডায়েরী বা দুগ্ধ খন্ডে লক্ষণীয় সম্প্রসারণ হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যে হাজার হাজার পরিবার এই খন্ডের উপর জীবিকার জন্য নির্ভরশীল। কিন্তু প্রস্তাবিত বিলে অনুৎপাদনশীল গাই বিক্রির পথ সম্পুর্ন বন্ধ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অর্থাৎ গরু দুধ না দিলে ও তাকে বিক্রি করা যাবে না। অন্যদিকে দামরা গরু বা পুরুষ গরুকে লালন পালন করে ১৪ বছর পর মাংস খাওয়ার জন্য বধ করা যেতে পারে। আজকাল অনেক যুব সম্প্রদায় দুগ্ধ ব্যবসার জন্য গরুর ফার্ম খুলেছে। সেখানে যদি ৫০টা গাই গরু থাকে তবে ৫বছর পর দু-তিনশ দমরা গরু জন্ম দেয় তাহলে তাদের ১৪বছর না হলে বিক্রি করা যাবে না। ফলে এই অনুৎপাদনশীল গরু গুলোকে লালন-পালন করতে অনেক লাখ টাকা খরচ করতে হবে।এই পরিস্থিতিতে অনেকেই এই ব্যবসা বন্ধ করে দেবে। ফলে রাজ্যে আর্থিক বিপর্যয়ের সঙ্গে সঙ্গে কর্মসংস্থানের সংকটও দেখা দেবে।
অন্যদিকে প্রস্তাবিত বিলে বলা হয়েছে যে ৫কিলোমিটার ব্যাসার্ধের ভিতরে মন্দির বা নামঘরের সন্মুখে বীফ ক্রয় বিক্রয় করা যাবে না। কিন্তু আসামের সমাজ জীবনের সঙ্গে সেটা খাপ খায় না। কেননা শত শত বছর ধরে আসামে হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ এক সঙ্গে বসবাস করছেন। আসামের প্রত্যেক টা গ্ৰামেই কাছাকাছি মুসলমান বসতি অঞ্চল আছে। এমনকি গুয়াহাটি শহর সহ আসামের অন্যান্য ঘন বসতি শহরে ঘর ভাড়া নিয়ে হিন্দু-মুসলমান-খৃষ্টান মানুষ পাশাপাশি ভাবে থাকেন। সেই ক্ষেত্রে বীফ ক্রয় বিক্রয়ের যে বাধা নিষেধ তাই মোটেই যুক্তিগ্ৰাহ্য হতে পারে না। কেননা সেটা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও বিভাজন বৃদ্ধি করবে।।
আশ্চর্যের কথা যে রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা মন্তব্য করেছেন যে শহর অঞ্চলে বসবাস করা মুসলমান বা খৃষ্টান জনসাধারণ ঘরে গোমাংস ব্যবহার করতে পারবেন না। অথচ উচ্চতম ন্যায়ালয়ের স্পষ্ট অভিমত আছে যে কোনো লোকের ব্যাক্তিগত খাদ্যাভাসের হস্তক্ষেপ করার অধিকার কারো নেই।
বিলে গরু-মহিষের পরিবহনের উপর যে ধরনের নিয়ম নীতি প্রয়োগ করা হয়েছে সেটা রাজ্যের অর্থনীতির ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আসামের যে কোনো জেলা থেকে অন্য কোনো জেলায় গরু-মহিষ পরিবহন অবাধ করা উচিৎ। তদুপরি উপযুক্ত কাগজ পত্র থাকার পরও অন্য এক রাজ্য থেকে আসামের মধ্য দিয়ে উত্তর পূর্বাঞ্চলের অন্য রাজ্যে গরু-মহিষ পরিবহনের উপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার ফলে পুর্বোত্তর নিকটবর্তী রাজ্য গুলোর জনসাধারণের সঙ্গে সম্পর্ক বিনষ্ট হবার আশংকা বৃদ্ধি পাবে। সেই সঙ্গে কেবলমাত্র সন্দেহ বশতঃ পুলিশ অধিকর্তা যে কোনো ঘর বা অঞ্চলে প্রবেশ করে খানা-তালাসী চালানোর যে অবাধ অধিকার দেয়া হয়েছে তার কোনো মতেই গ্ৰহণ যোগ্য না।এই খানাতল্লাশির সময় দন্ডাধীসের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা উচিৎ। সন্দেহবশত প্রমাণ ছাড়া গরু মহিষ জব্দ করা আইনী বিচারের পরিপন্থী। উদ্বেগের কথা যে গরু মহিষ পরীক্ষা করা বা খানা তল্লাশি চালানো ইত্যাদি কার্যে বেসরকারী লোককে ব্যবহার করার সুযোগ বিলে রাখা হয়েছে সেটা অত্যন্ত বিপদজনক।আইনী বিচারের পরিপন্থী।
পরিশেষে সামগ্ৰিকভাবে বলা যেতে পারে যে এই অদূরদর্শী, আর্থিক ভাবে ক্ষতিকারক, স্বেচ্ছাচারী এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন বাদী অসম গোসংরক্ষণ বিল ২০২১ এর বিরুদ্ধে তীব্র বিরোধিতা করতে হবে। বিজেপি সরকারের ধর্মীয় বিশ্বাসের অজুহাতে অসম ধ্বংস এবং বিভাজনের গহ্বরে ঠেলে দেয়া যাবে না তার জন্য সজাগ এবং সরব হয়ে জনসাধারণকে এগিয়ে আসতে হবে।