চৈতালী নন্দী: চিন্তন নিউজ:৬ই এপ্রিল:- .করোনা মহামারীর ফলে এক অভূতপূর্ব সংকটের মধ্যে দিয়ে চলেছে বিশ্ব। ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৬৫ঁ হাজার মানুষের। এই পরিস্থিতিতে একটি টিভি চ্যানেলের আলোচনায় বসেছিলেন বিশ্বের তথা দেশের চারজন অর্থনীতিবিদ।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ডঃ অমর্ত্য সেন বলেন ,দেশের মানুষের মধ্যে একদল যখন ভাবছে কিভাবে করোনা ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচা যাবে অন্য একদল মানুষ তখন ভাবছে ,কোথায় দুটো ভাত পাওয়া যাবে? তার ব্যবস্থা কি করে হবে? অন্যদিকে তাঁর উত্তরসূরী নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিত বন্দোপাধ্যায় মনে করছেন, মানুষের যদি অভাব থাকে তাহলে সে কাজের খোঁজে রাস্তায় বেড়োতে বাধ্য হবে, এরফলে লকডাউনে র কাঙ্ক্ষিত সুফল আসবেনা। তাঁর সহযোগী আর এক নোবেলজয়ী এস্থার ডুফলো মনে করেন যে, করোনার সংক্রমণ আটকানোর জন্যে মানুষের জন্যে খাবারের ব্যবস্থা করা জরুরী । অপরদিকে অর্থনীতিবিদ ডঃ কৌশিক বসু তাঁর স্বভাবসিদ্ধ জোরালো বক্তব্যে জানান, যারা মনে করছেন যে আগে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইটা জিতে নিই, জাতীয় অর্থনীতি নিয়ে পরে ভাবা যাবে, তারা ঠিক বলছেন না।
যদি দেশে লকডাউনের সুফল পেতে হয় তবে মানুষের হাতে টাকা তুলে দিতে হবে। না হলে মানুষ শুধুমাত্র খাবারের খোঁজে রাস্তায় নামবে…শুধুমাত্র রেশন বা বিনামূল্যে খাবার দিলেই হবেনা, তাদের অন্য অনেক চাহিদা থাকে, সেগুলো যাতে তারা পূরণ করতে পারেন তার উপযুক্ত পরিসর তৈরী করে দিতে হবে। তা হলে মানুষ লকডাউনের সময়ে প্রশাসকের সঙ্গে সহযোগিতা করবে।বর্তমান পরিস্থিতিতে বললেন ডঃ অভিজিত বন্দোপাধ্যায়।এ ব্যাপারে একই মত পোষণ করেন নোবেলজয়ী এস্থার ডুফলো। তিনি বলেন মানুষের পেটে খাবার না থাকলে, মানুষ কে ঘরে আটকে রাখা সম্ভব হবেনা। যা লকডাউনের উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করবে। করোনা পরবর্তী সময়ে অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে এখন থেকেই তার প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।
মোদির কথামতো করোনা পরিস্থিতিকে’ যুদ্ধকালীন’ বলার সঙ্গে ডঃ অমর্ত্য সেন সহমত নন। তাঁর মতে ভারতের মতো দেশ যেখানে মানুষে মানুষে রয়েছে এতো বৈচিত্র্য, বিভিন্নতা, এতো মত, এতোরকম চাহিদা এই পরিস্থিতি কে ‘যুদ্ধকালীন’কোনো ভাবেই বলা যায়না।লকডাউনের সঙ্গে সঙ্গে যদি কর্মসংস্থান হারিয়ে যায়, তবে রোজগার বন্ধ হয়ে যাবে। তখন মানুষ শেষে রোগে নয়, খাদ্যের অভাবে মারা যাবে। তিনি মানুষ কে আরও সহযোগী হয়ে উঠতে বলেন।
অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর মতে এই মুহূর্তে যারা মনে করছেন, আগে করোনার মোকাবিলা করি, পরে অর্থনীতি নিয়ে ভাবা যাবে , তারা বড় ভূল করছেন। করোনার মোকাবিলা করতে গিয়ে যদি অর্থনীতির বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়া হয়, ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষ তার মাশুল গুনবে।যার পরিণাম ভয়ঙ্কর হতে পারে। যদিও করোনা মোকাবিলায় ভারত সরকার কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে, তবুও তার মধ্যে কিছু ফাঁক থেকে গেছে। টাকার দাম যদি ক্রমাগত পড়তেই থাকে ,তবে দেশের অর্থনীতির ধস রোধ করা যাবেনা। তার প্রভাব সরাসরি পড়বে মানুষের উপর।সুতরাং প্রশ্ন হোলো করোনার মোকাবিলা না দেশের অর্থনীতি নয়, করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি একইসঙ্গে দেশের অর্থনীতির সঠিক দিশা দেখানোই মূল কাজ হবে।