রঘুনাথ ভট্টাচার্য: চিন্তন নিউজ:২৪শে এপ্রিল:–বিশ্ব-স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে , করোনা অতিমারী আরও অনেক প্রাণ নিভিয়ে দেবে বলেই আশঙ্কা। এ পর্যন্ত ( বৃহস্পতিবার,রাত ১২টা)
সারা পৃথিবীতে করোনা-মৃত্যু সংখ্যা প্রায় ১লক্ষ৮৫ হাজার। দুশ্চিন্তার বিষয় হল, আফ্রিকা,মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্য ইউরোপে দাপট বেড়ে চলেছে। এই জনবহুল অঞ্চলে এই ভীষণ মারের প্রকোপ যদি গোষ্ঠী সংক্রমণ পর্যায়ে পৌঁছে যায় তবে ধ্বংস আরও বিপুল ও দ্রুততর হওয়ার সম্ভাবনা।
বিশ্ব-স্বাস্থ্য সংস্থার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মাইকেল রায়ানের মতে আফ্রিকার বৃহদংশে শুধু বাইরে থেকে আশা রোগীকেই পাওয়া গেছে। কিন্তু ঐ অঞ্চলের আভ্যন্তরীন জনসমষ্টিতে এই ভয়াল সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে সে কী রূপ নেবে তা অনুমান করা ভীতিপ্রদ। ইতিমধ্যে পাওয়া খবর অনুযায়ী জানা সংক্রমণের সংখ্যা – ঘানায় ১১৫৪, আইভরি
কোস্টে ৯৫২, তিউনিশিয়ায় ৯০৯, নাইজেরিয়ায় ৮৭৩।
বিশেষজ্ঞদের মতে এই সংখ্যায় আসল বিপদের প্রকৃতি পাওয়া যায় না। কারণ এটাকে এখনও মহামারীর সংজ্ঞায় ফেলা যাচ্ছে না। কিন্তু আকাশ ভরা সিঁদুরে মেঘে। গত এক সপ্তাহে সুদানে সংক্রমণের বৃদ্ধির হার ২৫০%, সোমালিয়ায় ৩০০%। এতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই অঞ্চলে কোভিড-১৯এর প্রবল ও ব্যাপক সংক্রমণ আসন্ন।
লাতিনা আমেরিকার চিত্র এখনও পূর্ণ ব্যক্ত নয়।এ পর্যন্ত ব্রাজিলে মৃত্যু ২৯৩৪, ইকুয়েডর ৫৩৭, পেরু ৫৩০, কলম্বিয়া ২০৬, চিলিতে ১৬০। ঠিক কোন স্তরে আছে এখানে সংক্রমণ সে তথ্য এখনও সহজলভ্য নয়, তবে এখনও যে তৃতীয় স্তর-অর্থাৎ গোষ্ঠী সংক্রমণ এখনও ছোঁয়নি বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা। আশঙ্কা,এই অবস্থায় সংক্রমণ দ্রুততর হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
হু- র অধিকর্তা টেড্রোস ঘেব্রেইসুস জানাচ্ছেন, এই মহাদেশ দুটিতে দ্রুত সংক্রমণের আশঙ্কাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। এ যাবৎ কোভিড-১৯ শের যে চরিত্র যা দেখা গেছে তাতে এই এলাকায় কোভিড-১৯ প্রাথমিক স্তরে রয়েছে বলেই অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।
একটি বিষয়ে হু-য়ের সমীক্ষার ফলাফল অতি হতাশ করছে। তাঁরা বলেছেন উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের অনেক দেশে হাসপাতালের বাইরের মৃত্যু যেমন, নার্সিংহোমে,বৃদ্ধাবাসে,
কেয়ার হোম, ইত্যাদিতে যে বিপুল পরিমাণ মামুনের মৃত্যু হয়েছে সেগুলির হিসাবে আসা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
কিন্তু আঁধারে আলো জ্বলে, রাত্রের পরে ভোর হয়। ঝড়ের রাত্রি শেষে যেমন আলো ফোটে নানা বাধা পেড়িয়ে, তেমনি এই ভয়ঙ্কর শত্রুর প্রতিষেধক আবিষ্কার এখন অত্যন্ত অগ্রসর স্তরে, একথা জোর দিয়ে বলা যায়। নানা দেশের ঐকান্তিক গবেষণায় লক্ষণীয় অগ্রগতির কথা প্রকাশ হয়েছে। আমেরিকার কোম্পানির বানান ওষুধ
‘রেমডেসিভি’ যেমন প্রথম পরীক্ষায় আশা জাগাতে পারেনি, যদিও প্রেসিডেন্ট ক্যাম্পের ঘোষণায় প্রত্যাশা জেগেছিল। এছাড়াও ফ্রান্সে,অষ্ট্রেলিয়ায়, চীন প্রভৃতি দেশে রোগ হারাবার ওষুধ আবিষ্কারের প্রচেষ্টা এখনও আশার আলো দেখাচ্ছে না বলেই প্রকাশ, যদিও গভীর প্রচেষ্টা বহমান সেকথা বলাই বাহুল্য।
ইতিমধ্যে সায়েন্স নিউজ পত্রিকার প্রতিবেদনে যেন মেঘের ফাঁকে সূর্যের আলোর মত উঁকি দিল। তাঁরা জানাচ্ছেন যে, অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা প্রফেসর সারা গিলবার্ট-এর নেতৃত্বে অতিদ্রুত কার্যকরী এক ভ্যাক্সিন আবিস্কারের ব্যাপারে নিশ্চিত করেছেন। তাঁরা আসন্ন সেপ্টেম্বরের মধ্যে এক মিলিয়ন ডোজ ঐ ভ্যাক্সিন বাজারে দিতে পারবেন বলে ভরসা দিয়েছেন।ভ্যাক্সিনটির নামও দেওয়া হয়েছে,-
ChAdOx1 ( চেডক্স ১ )। ঐ বিজ্ঞানীদের মতে , প্রমাণিত যে এটা কোভিড-১৯শের প্রতিষেধক।
অবশ্য, আরও দুটি দেশ আমেরিকা ও চীন-কোভিডয়ের ভ্যাক্সিনের গবেষণায় অনেকটাই এগিয়ে গেছেন ; কিন্তু তাদের অনুমান যে তাঁদের ওষুধটি বাজারে আসতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লেগে যেতে পারে।
চেডক্স ১ ভ্যাক্সিন, অক্সফোর্ড -য়ের অপর বিজ্ঞাণী প্রফেসর আড্রিয়ান হিল জানান যে, ইউ এসে একটি, ইউরোপে দুটি এবং চীন ও ভারতে একটি করে সংস্থা এই ভ্যাক্সিন প্রস্তুত করার কাজ হাতে নিয়েছেন। ৫০০জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে প্রাথমিক ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চালু হয়েছে। তৃতীয় স্তরে অর্থাৎ চূড়ান্ত পর্যায়ে আরও ৫০০০ জন স্বেচ্ছাসেবক এই মহান কাজে উপলব্ধ হবেন বলে ভরসা পাওয়া গেছে।
প্রফেসর গিলবার্ট বলেন ,’আমি এই টেকনোলজিতে অনেক অভিজ্ঞতার পর করোনা-মার্স এর ভ্যাক্সিন পেয়েছিলাম।আমার এখন দৃঢ় ধারণা যে,কোভিড – ১৯ এর ক্ষেত্রেও
আমার সেই অভিজ্ঞতা সার্থক হবে।’
উল্লেখ থাকে যে, বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে
এ বিষয়ে অতি দ্রুততার সঙ্গে কিছু করতে যাওয়া হয়ত মারাত্মক হতে পারে,কারণ এই জাতীয় ভ্যাক্সিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বহু সময়েই ঘাতক প্রতিপন্ন হয়েছে। কাজেই, তপ্ত কড়াই থেকে বাঁচতে জ্বলন্ত উনুনে ঝাঁপ দেওয়ার কোনো কাজের কথা নয়। আরও সময় নিয়ে বিস্তারিত পরীক্ষা নিরীক্ষার পরই মাত্র এই প্রতিষেধক মানুষের ব্যবহারের জন্য খোলা বাজারে বিক্রির সুপারিশ করা উচিত।
যাই হোক, জন সাধারণ অধীর আগ্রহে ও গভীর প্রত্যাশায় তাকিয়ে আছেন সেই সব কৃতিত্ব বিজ্ঞানীদের মুখের দিকে, যাদের পূর্বজরা তাঁদের মেধার শক্তিতেই এই পৃথিবীকে অনেক বিপদে ত্রাণ করেছেন যুগের পর যুগ ধরে।