রঘুনাথ ভট্টাচার্য:চিন্তন নিউজ:২রা এপ্রিল:- কোভিড-১৯ মহামারী সারা বিশ্ব গ্রাস করেছে। এই নিয়ে আলোচনা, মন্তব্য, উপদেশ নিয়ত ভেসে বেড়াচ্ছে। বাদুড়ের ঝোল থেকে শুরু করে আদায় ঝাল , এরকম নানা পরামর্শ বর্ষিত হচ্ছে। প্রায় দিগ্-ভ্রষ্ট হওয়ার মত অবস্থা সাধারণের। অবশ্য অনেকেই বুঝে গেছেন ,’ যা রটে তার সবটা বটে না।’ ব্যাপার দেখে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা(হু) তাঁদের মতামত নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। যার সারাংশ দেওয়ার চেষ্টা করা হল । আশা সাধারণ জনের যদি কিছু কাজে লাগে এই বিপর্যয়ের দিনে। দুটো ভাগে ভাগ করা হয়েছে সব বিষয় গুলোকে -*কল্পনাওবাস্তব*।
*কল্পনা*-শৈত্য বা তুষার পাতে এই ভাইরাস মরে যায়।
*বাস্তব–এটা বিশ্বাস করার এখনও কোনো কারণ নেই, যেহেতু, বাইরের তাপমাত্রা যাই হোক না কেন, সুস্থ মানব শরীরের তাপমাত্রা স্থিতিশীল(৩৬.৫°-৩৭°সেলসিয়াস) ।
*কল্পনা*-ভিটামিন সি আছে এমন ওষুধ বা পথ্য শরীরের ইম্যুনিটি বাড়িয়ে এই ভাইরাস কে আটকে দিতে পারে।
*বাস্তব*-ভিটামিন সি জাতীয় ওষুধ বা পথ্য কোভিড-১৯ কে আটকা তে সাহায্য করে না।
*কল্পনা*-করোনা ভাইরাস মশা বাহিত।
*বাস্তব*-এটা মশাবাহিত নয়।
*কল্পনা* -রূপো ধোয়া জল খেলে ১২ঘন্টায় ইম্যুনিটি বাড়িয়ে দেয় ও এ ভাইরাস নাশ করে।
*বাস্তব*-এটা নিছকই প্রমাণ হীন এক বক্তব্য। বরং এতে কিডনির ক্ষতি হতে পারে।
*কল্পনা*-শিশুরাই বেশী করোনার শিকার হবে।
*বাস্তব*-পরিসংখ্যান মতে বরং আক্রান্তদের মধ্যে শিশুর সখ্যাই কম ।
*কল্পনা*-করোনা কোভিড-১৯ এর টিকা পাওয়া গেছে।
*বাস্তব*-গভীর গবেষণা চলছে নিয়ত।
অনুমান এখনও কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে।
*কল্পনা*-প্রচুর পরিমাণে জল খেলে করোনা নিবারণ করা সম্ভব।জলের চাপে ভাইরাস গলা থেকে পেটে নেমে এ্যাসিডে মরে যাবে।
*বাস্তব*-জল খাওয়া মাপমত শরীরের পক্ষে সাধারণ ভাবে উপকারী। কিন্তু, শ্বাসযন্ত্রের ইনফেকশনজনিত কোনো ভাইরাস থেকে শুধু জল খেয়ে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।
*কল্পনা*-অতিবেগুনি রশ্মি জনিত কোনো আলো ইত্যাদির সাহায্যে এই ভাইরাসকে নষ্ট করা যায়।
*বাস্তব*-ঐ ভাইরাস ওতে নষ্ট হয় না। বরং এতে গুরূতর চর্মরোগ হতে পারে।
*কল্পনা*-করোনা-১৯ আক্রমণ ঠান্ডা লেগে জ্বর- জ্বালারি রূপান্তর।
*বাস্তব*অবশ্যই নয়। করোনা ভাইরাস একটি দীর্ঘ ভাইরাস পরিবার।আলোচ্য ভাইরাস সেই পরিবারের একটি নতুন প্রকার। সার্স- মার্স- কোভ/২ ইত্যাদি যেগুলি পরস্পরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, ঠান্ডা লাগার ভাইরাস সেই গোষ্ঠীর।কিন্তু নোভেল করোনা ভাইরাস-১৯ সম্পূর্ণ নতুনবৈশিষ্ট্য বিশিষ্ট। তাই এর প্রতিষেধক ও চিকিৎসা নূতন করে আবিষ্কার করতে হবে।
*কল্পনা*বলা হচ্ছে, ৩০সেকেন্ড দম আটকে থাকতে যিনি পারেন তিনি স্বাস্থ্যবান, তাই করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত।
*বাস্তব*ফুসফুসের অন্যকোনো অসুখ নির্ণয় করতে হয়ত এই পরীক্ষা কাজে লাগবে, কিন্তু
করোনা আক্রমণের সনাক্তকরণে এর কোনো ভূমিকা নেই। কল্পনা*-এই ভাইরাস গরম আবহাওয়ায় বা কড়া রোদ্দুরে বাঁচে না।
*বাস্তব*অনেকে অবশ্য সার্স বা মার্স-এর ক্ষেত্রে এই কল্পিত প্রয়োগের প্রভাব দেখে এমন মতামত প্রকাশ করছেন, কিন্তু এই নূতন ভাইরাসের ক্ষেত্রে এটা কতটা কার্যকরী সেটা এখনও নিশ্চিত হয়নি। এই ভাইরাস সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেলিয়ায় সক্রিয় আছে। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের এক সমীক্ষা জানাচ্ছে যে এই ভাইরাসটি চীনের দীর্ঘ তাপ-শৃঙ্খল ও ভেজা ভাবের আবহাওয়ায় রীতিমত সক্রিয় আছে দীর্ঘদিন ধরে। হু জোর দিয়ে বলছে যে কোভিড-১৯ যেকোন জায়গায় ছড়াতেপারে।
*কল্পনা*হাত শুকানোর যন্ত্র দিয়ে এই ভাইরাস মারা যায়।
*বাস্তব* হু-য়ের খবর অনুযায়ী হাত ধোয়ার পর এ মেশিন ব্যবহার করা যেতেই পারে, কিন্তু হাত ধোয়া বাদ দিয়ে নয়।
কল্পনারসুন খেলে কোভিড-১৯ এর আক্রমণ আটকানো যায়।
বাস্তবরসুন শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী। কিন্তু বর্তমান ভাইরাস আক্রমণ প্রতিহত করতে এটা কাজে এসেছে ,এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেই
এখনও।
কল্পনাইনফ্লুয়েঞ্জা বা নিউমোনিয়া টিকা নেওয়া থাকলে, কোভিড-১৯ ছুঁতে পারবে না।
বাস্তবএ ধারণা ভীষণ ভুল। কোভিড-১৯এর ভ্যাক্সিন তৈরি করার গবেষণা চালিয়ে
যাচ্ছেন বৈজ্ঞানিকরা। এখনও মাসকয়েক লাগবে বলে ধারণা।
কল্পনাআক্রান্ত কোনো জায়গা থেকে পাঠানো চিঠিতে বা প্যাকেট গ্রহণ করা বিপজ্জনক।
বাস্তবযাঁরা এরকম চিঠি বা প্যাকেট নিচ্ছেন তাঁরা ঝুঁকিতে আছেন এটা ঠিক নয়। কারণ, হু-র মতে করোনা-১৯ কোনো তলে কিছু ক্ষণের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়। কাজেই যে সমস্ত চিঠি বা প্যাকেট কয়েকদিন ধরে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পৌঁছুবে তাদের ওপর যাত্রাকালে প্রভাব থাকার সম্ভাবনা কম।
কল্পনাগরমজলে ‘হট বাথ’ এই ভাইরাস রোগ প্রতিরোধ করে।
বাস্তবমানুষের শরীরের উত্তাপ ৩৭° সে-য়ের আশেপাশে থাকে ‘হটবাথ’ নিলেও। কাজেই ‘ হটবাথ’ কোভিড-১৯ য়ের প্রতিবর্তী নয়।
কল্পনা এই ভাইরাস কেবলমাত্র বয়স্ক লোকের শরীরেই সংক্রমিত হয়।
বাস্তব সব বয়সের মানুষেরই করোনা১৯ সংক্রমণের সম্ভাবনা আছে। তবে বয়স্ক
লোক যেহেতু বয়সজনিত কারণে এজমা, সিওপিডী , ইত্যাদি অসুখে ভোগার কারণে দুর্বল থাকতে পারেন তাই তাঁরা ‘সফ্ট টার্গেট’ বিবেচিত হতে পারেন।
কল্পনা -করোনা কোভিড-১৯ আটকাতে বা চিকিৎসায় এ্যান্টিবায়োটিক উপযোগী।
বাস্তব-এটা একেবারেই ঠিক নয়। তবে কেউ হাসপাতালে ভর্তি হলে তাঁকে কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা করতে এ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হতেই পারে।
কল্পনা–সারা দিন ধরে বারবার গরম জল , চা,কফি তিন চারবার করে খেলে করোনা ১৯ আস্তে পারে না।
বাস্তব–ভুল কথা। তাপ মাত্রা কমায় করোনা কোভিড-১৯ কাবু হয়ে বলে দেখা যায়নি। এখনও পর্যন্ত ১৯৯টি দেশে
এই সংক্রমণ হয়েছে একই সময়ের সীমার মধ্যে।
কল্পনা-থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে এই ভাইরাস আক্রান্তকে সনাক্ত করা যায়।
বাস্তব -সন্দেহজনক রোগীর জ্বর না থাকলে কাউকে এই যন্ত্র দিয়ে করোনা কোভিড-১৯ বাহক হিসাবে সনাক্ত করা যায় না।
কল্পনা -সারা শরীরে এ্যালকোহল বা ক্লোরিন স্প্রে করলে এই ভাইরাস মরে যাবে।
বাস্তব -না। সেটা একেবারেই বৃথি চেষ্টা। বরং, বিপজ্জনক।
কল্পনাকরোনা কোভিড-১৯ আক্রান্ত মা যেন তাঁর সদ্যোজাত শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকেন।
বাস্তব -হু পরিস্কার বলছে, ভাইরাস আক্রান্ত মা তাঁর সদ্যোজাত বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন( অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে), স্পর্শ করতে পারবে বা তাকে নিয়ে পৃথক ঘরে থাকতে পারেন।
কল্পনা -গরম নুন-দেওয়া জল দিয়ে গার্গল্ করলে করোনা ১৯ হবেনা।
বাস্তব–হু -য়ের মতে গার্গল করে এই ভাইরাস রোখা যায় না। কারন, আক্রান্ত স্থল হল শ্বাসনালী দিয়ে ফুসফুস। বরং, ইথানল,ব্লীচ দিয়ে গার্গল খুবই বিপজ্জনক।
(হু-র প্রচারিত সংবাদ যা on-line TOI তে বেড়িয়েছে,তাঁর ভিত্তিতে সহজবোধ্য ভাষায় সাধারণ মানুষের জন্য তথ্যগুলি চিন্তনে প্রকাশের জন্য সংকলিত করা গেল।)