কলমের খোঁচা

শ্রেণী বৈষম্য এবং করোনা ভাইরাস, -রঞ্জন মুখার্জী


নিজস্ব কলম:চিন্তন নিউজ:২৪শে মার্চ:- করোনা ভাইরাস আজ এক আতঙ্কের নাম । অনেকেই বলছেন করোনা ভাইরাস সারা পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে জাতি, ধর্ম, শ্রেণী, ভাষা, সব প্রাচীর ভেঙে দিয়ে এক ছাতার তলায় এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে । সত্যি কি তাই ?

আমি কর্মসূত্রে রাজস্থানের যে অঞ্চলে থাকি সেখানে ১৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে অন্তত কুড়িটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন আছে, যেগুলো রিকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন নামেই পরিচিত। এক একটি জোনে কোথাও জাপানিদের ফ্যাক্টরি আছে, যেটা জাপানিজ জোন নামে পরিচিত । কোথাও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আছে দেশীয় কারখানাগুলো।

গত তিনদিন আগে রাজস্থান সরকার রাজস্থান রাজ্যটিকে লকডাউন ঘোষণা করলো। লকডাউন একটা সঠিক এবং অত্যাবশ্যকীয় পদক্ষেপ, এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
কিন্তু এই লকডাউন কি সত্যিই সমস্ত মানুষের জীবনে একই ভাবে প্রভাব বিস্তার করল? এটা ঠিক , যে করোনা ভাইরাস জাতি ধর্ম ভাষা বা অন্য কিছু দেখে বিস্তার লাভ করছে না। এতেই মানুষ বেশ জোর গলায় বলতে শুরু করেছে, যে সমস্ত মানুষকে করোনা এক ছাদের তলায় এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ।

আমার অভিজ্ঞতাটা একদম অন্যরকম।আগেই বলেছি কুড়িটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন এই অঞ্চলে আছে। একেকটি জোনে কমবেশি ৪০ টি করে কারখানা আছে। কারখানাগুলোর প্রকৃতি অনুযায়ী কোনও কারখানাতে ১০০ লোক চাকরি করে, কোনও কারখানাতে আবার এক হাজার লোক চাকরি করে। যারা এসব কারখানাগুলোতে চাকরি করেন তাদের মধ্যে আবার কত রকম শ্রেণীবিন্যাস ভেবে দেখুন । ম্যানেজমেন্ট স্টাফ, ক্লারিক্যাল স্টাফ, এবং শ্রমিক। শ্রমিকদের মধ্যে আবার স্থায়ী কর্মী এবং অস্থায়ী কর্মী । অস্থায়ী কর্মীদের মধ্যে আবার কন্ট্রাকচুয়াল ওয়ার্কার এবং টেম্পোরারি ওয়ার্কার।

স্থায়ী কর্মী এবং অস্থায়ী কর্মীদের মধ্যে আনুপাতিক হারটা প্রায় ফিফটি-ফিফটি। অর্থাৎ এই কুড়িটা জোনে যদি আনুমানিক ৫ লক্ষ লোক চাকরি করে তারমধ্যে আড়াই লক্ষ লোক অস্থায়ী । এই লকডাউন অবস্থাতে বেশিরভাগ কারখানা তেই ছুটি ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে ।যারা স্থায়ী কর্মী তারা আপাতত সবেতন ছুটি পাচ্ছেন। যারা অস্থায়ী শ্রমিক তাদের তো নো ওয়ার্ক- নো পে। অর্থাৎ লকডাউন পিরিওড যতদিন চলবে ততদিন অস্থায়ী কর্মীরা কোন বেতন পাবেন না।

এবার আসা যাক রাষ্ট্রের ভূমিকার কথায়। রাষ্ট্র লকডাউন করেছে সঠিকভাবেই । লকডাউন এর ফলে যে সমস্ত মানুষ কর্মচ্যুত হল এবং তাদের পরিবারগুলি অনাহারে থাকার সম্ভাবনা যুক্ত হলো তাদের প্রতি রাষ্ট্রের কি কোনো দায়িত্ব নেই? এই কারখানা গুলির মালিকরা কখনোই এই দায়িত্ব নেবে না। রাষ্ট্র নিতে পারে, কিন্তু নেবে না । শ্রমিক সুরক্ষা বলে যে বিষয়বস্তুটি ছিল বিগত পাঁচ বছরে, সে সমস্ত উঠে গেছে। অস্থায়ী কর্মচারীদের কাজ নেই তো বেতন নেই।আজ যদি এই অস্থায়ী কর্মচারীরা এই অসাম্যের বিরুদ্ধে দাবি তোলে, তাহলে আপনি আমি সবাই তাদের রাষ্ট্রদ্রোহী বলব, কারণ আমরা সবাই বলছি এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে সতর্ক থাকতে।

ছোট থেকে যা পড়ে এসেছি, আজও আমি সেই কথাটি বিশ্বাস করি- শ্রেণীবৈষম্য যতদিন থাকবে, শ্রেণীসংগ্রাম ততদিন থাকবে। করোনা এলেও থাকবে , না হলেও থাকবে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।