মিতা দত্ত: চিন্তন নিউজ:১৪ই জুন:–“যাবতীয় অস্ত্রশস্ত্র দখল করার পর ফেরার পালা।শত্রুর বিভিন্ন বাহিনীর মোকাবিলা করতে করতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ফিরতে হবে।এঅবস্থায় আহত যোদ্ধাদের সঙ্গে পেছনে কারুর থেকে যাওয়া দরকার। চে থেকে গেলেন। অল্প কয়েকজন যোদ্ধাকে সঙ্গী হিসেবে নিয়ে আহতদের পরিচর্যা করলেন, তাদের জীবনরক্ষা করলেন, তারপর ফিরে এসে যোগ দিলেন আমাদের সঙ্গে।” – –
ফিদেল কাস্ত্রো তাঁর মৃত্যুর পর এইভাবেই তাঁর স্মৃতিচারণ করেছেন।
আর্জেন্তিনায় রোজারিও শহরে ১৯২৮ সালের। ১৪ ই জুন আর্নেস্তো গুয়েভারার জন্ম ।১৯৫৩ সালে তিনি ডাক্তারী পাশ করলেন । কিন্তু শুধুমাত্র চিকিৎসক হয়ে জীবন কাটানোর তাঁর চরিত্রে ছিলো না। বিশ্ববিপ্লবের ডাক তাঁর অন্তরে ধ্বনিত হয়। সেই ডাকে তিনি যাপিত জীবন ব্যয় করেছেন। তাই তিনি ব্যতিক্রমী । তাঁর জন্মভূমি গুয়েতামালা তখন সাম্রাজ্যবাদের কবলে। তিনি সাম্রাজ্যবাদকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করতেন। গুয়েতেমালাকে সাম্রাজ্যবাদের শৃঙ্খলমুক্ত করার জন্য তিনি চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। কিন্তু এই ব্যর্থতার হতাশ হয়ে বিপ্লববিমুখ হওয়া তাঁর ধাতে নেই। কারণ সহযোদ্ধাদের দেওয়া নাম চে’, ছিলেন আন্তর্জাতিক, যে রচনা করেছে এক গৌরবময় এবং অনপনেয় ঐতিহাসিক মহাকাব্য।
তিনি গুয়েতামালা থেকে মেস্কিকোয় আসেন, কিউবায় বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে পরিচয় , মেক্সিকো থেকে সাগর পেড়িয়ে কিউবায়, দীর্ঘ সংগ্রামের ঐতিহাসিক অধ্যায়। সরলতা, কমরেডসুলভ মনোভাব ব্যক্তিত্ব, তাঁকে সকলের প্রিয়পাত্র করে তুলেছিল।শুধুমাত্র যোদ্ধা নয় তিনি কিউবান যোদ্ধা ও শত্রুপক্ষের আহত সৈনিকদের চিকিৎসা করতেন। এই যুদ্ধের সময় যে বিষয়টি সবচেয়ে সকলের দৃষ্টিগোচর হতো সবচেয়ে বিপদজনক দায়িত্ব পালনের জন্য সবার আগে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা। কিউবার জয় এলো। তিনি হ’লেন মুক্ত কিউবার উচ্চপদস্থ নেতা ও পেলেন দুনিয়াজোড়া সন্মান।
কিউবার শিক্ষামন্ত্রী, কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা পর্ষদের সদস্য ইউনাইটেড পার্টি অফ দ্য কিউবান সোশালিস্ট রেভলিউশন এর কেন্দ্রীয় কমিটি, পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য চে’ গুয়েভারা। এই ক্ষমতা, নিরাপত্তা স্বাচ্ছন্দ্য তাঁকে বেঁধে রাখতে পারলো না।
তামাম লাতিন আমেরিকা সমেত সারাদুনিয়ার মুক্তিকামী দেশ তাঁকে ডাকছে। ১৯৬৬ তে পা রাখলেন বলিভিয়ার মাটিতে। তারপর আবার যুদ্ধক্ষেত্র অনিশ্চিতের জীবন, সাথে আজন্মসঙ্গী হাঁপানি। ১৯৬৭ র ৮ ই অক্টোবর যুদ্ধক্ষেত্রে বন্দী ও পরেরদিন শত্রুর গুলিতে চলার পথে পূর্ণচ্ছেদ।
বলিভিয়ার সেই ইতিহাস গড়ার দিন রাতের কথা লিখে গেছেন তার ডায়েরিতে যা মুক্তিকামী মানুষের অমূল্য সম্পদ। চে’ নেই কিন্তু আছে এই গ্রহের সর্বত্র তাঁর উপস্থিতি।