রাজ্য

বাংলার চাহিদা কর্মসংস্থান


মৌসুমী চক্রবর্তী, চিন্তন নিউজ, ৬ এপ্রিল: দুই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকশন ওয়াচ’ এবং ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস’ (এডিআর)সমীক্ষা করেছে রাজ্যের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের ২১ হাজার বাসিন্দার মধ্যে। সমীক্ষা চালিয়ে শুক্রবার তারা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে কর্মসংস্থান সবথেকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
বিভিন্ন  রাজনৈতিক দলগুলি ধর্ম, সন্ত্রাস, জাতপাত নিয়ে  লড়াইয়ে নামতে চাইলেও দেশের সাধারণ মানুষের কাছে রাস্তাঘাট, গণপরিবহণই ভোটে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে জানিয়েছে এই সমীক্ষা। আরেকটি  সমীক্ষা জানাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের ভোটে এখানকার বাসিন্দাদের কাছে সব থেকে প্রয়োজনীয় বিষয়  কর্মসংস্থান।  কর্মসংস্থানকেই সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলে মনে করেন গ্রাম ও শহরের ৩৯.২৮ শতাংশ বাসিন্দা। আবার শুধু শহরের কথা ধরলে ৪৫ শতাংশ বাসিন্দা এই মত পোষণ করেন।
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্ভে রিপোর্ট, ২০১৮’ নামে ওই সমীক্ষা জানাচ্ছে, কৃষি ঋণ, কৃষিপণ্যের দাম, জল ও বায়ু দূষণ, শহরের যানজট, গণ-পরিবহণ ব্যবস্থাও ভোটারদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
রাজ্য সরকারের নারীর ক্ষমতায়ন ও নিরাপত্তা, শহরাঞ্চলে স্কুলশিক্ষা এবং গার্হস্থ্য ক্ষেত্রে বিদ্যুদয়নের কাজে ভোটারেরা কিছুটা সন্তুষ্ট বলে জানিয়েছে সমীক্ষকদের কাছে। তবে কর্মসংস্থান, কৃষি ঋণ প্রদান, জল ও বায়ু দূষণ প্রতিরোধে একেবারেই সন্তুষ্ট নন ভোটাররা ।
সমীক্ষকেরা পাঁচ নম্বরের বিচারে তিন নম্বর পাওয়াকে ‘গড়ে ভাল ফল’ বলে গণ্য করেছেন। কিন্তু মূল চাহিদাগুলির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের প্রাপ্তি  তিনের নীচেই রয়েছে।
ভোটারদের বাসস্থান অনুযায়ী, এই সমীক্ষাকে গ্রামীণ এবং শহুরে, দু’টি ভাগে ভাগ করেছেন সমীক্ষকেরা। সেক্ষেত্রে  দেখা গিয়েছে, গ্রামাঞ্চলের ভোটারেরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন কৃষিঋণ প্রদান, কৃষিপণ্যের দাম, বীজ ও সারের ভর্তুকিকে। শহরের  ভোটারদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসংস্থান, জল ও বায়ুদূষণ এবং যানজট। এই সব ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের কাজে  শহরবাসীরা  খুশি নন। যা দেখিয়ে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকশন ওয়াচ’-এর সভাপতি তথা বম্বে হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘ভোটারদের প্রত্যাশা যে পূরণ হচ্ছে না, সেটাই দেখা যাচ্ছে সমীক্ষায়।’’
এছাড়াও ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে ভোটারদের প্রবণতার বিষয়টিও উঠে এসেছে সমীক্ষায়। সমীক্ষকেরা জানান, বিধানসভা ভোটে মুখ্যমন্ত্রী-পদের প্রার্থীকে দেখেই ভোটারদের বড় একটি অংশ ইভিএমে মত প্রকাশ করেছিলেন নিজেদের। এছাড়াও সমীক্ষায় উঠে এসেছে  রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ভূমিকাও অনেক প্রভাবিত করে  ভোটারদের।
সমীক্ষকদের রাজ্য কো-অর্ডিনেটর উজ্জয়িনী হালিমের মতে, ‘‘একটি মানুষকে সব আসনে প্রার্থী ভেবে ভোট দেওয়া গণতন্ত্রের পক্ষে স্বাস্থ্যকর নয়।’’
সমীক্ষায় উঠে এসেছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। ৬৭ শতাংশ ভোটারেরই তা জানা আছে, ভোটে টাকা ও উপহার বিলানো নিষেধ । কিন্তু সেই ভোটারদের ৩২ শতাংশ মেনে নিয়েছেন, নিষেধ সত্ত্বেও কিছু জায়গায় ভোটারদের মধ্যে টাকা বা উপহার বিলোনো হয়ে থাকে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।