দীপশুভ্র সান্যাল,চিন্তন নিউজ: ১২ নভেম্বর,২০২৪:- কেউ আছেন প্লাস্টিক টাঙিয়ে, কারো কোলের বাচ্চা ভাঙা ঘরে মাটিতে শুয়ে তবুও মেলে নি ঘর আবাসের যোজনার ঘরের লিস্ট খতিয়ে দেখে শ্রমিকদের ক্ষোভ আঁচ করতে পেরে কার্যত বাগান ছেড়ে পালালেন বিডিও সংবাদ মাধ্যমকে বললেন যা বলার ডি এম বলবেন।
আবাস যোজনার বঞ্চনা নিয়ে লাগাতার আন্দোলনের চাপে অবশেষে করলা ভ্যালী চা বাগানে আসতে বাধ্য হলেন জলপাইগুড়ি সদর বিডিও মিহির কর্মকার। মঙ্গলবার তিনি জয়েন্ট বিডিও সহ বিডিও অফিসের অন্যান্য আধিকারিকদের নিয়ে বাগানে পৌঁছান । সঙ্গে ছিল কোতয়ালী থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী।
এদিন বাগানের সিপিআই(এম) পঞ্চায়েত সদস্যা রুবিনা মুন্ডা সদর বিডিওকে বাগান এলাকার শ্রমিকদের বাড়িগুলি ঘুরে দেখান। উপরে প্লাস্টিক টাঙানো মাটির ঘরের সামনে দাড়িয়ে উপস্থিত সবাই বিস্মিত হয়ে যায় কেনো এদের আবাস তালিকায় নাম নেই। একই রকম কিছু বাড়িতে গিয়ে অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে পড়েন বিডিও। তারপর সংবাদ মাধ্যমকে কার্যত এড়িয়ে এলাকা ছাড়েন তিনি। এর আগেই বাড়তে থাকা ক্ষোভকে প্রশমিত করতে জলপাইগুড়ি সদর বিডিও অফিসে হেল্প ডেস্ক চালু হয়েছিল । হেল্পডেস্ক চালু হতেই কাগজপত্র নিয়ে অভিযোগ জানাতে অফিসে বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের মানুষের লম্বা লাইন দেখা গিয়েছিল।
আবাস নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের চা বাগান থেকে কৃষি বলয় ক্ষোভ রয়েছে সর্বত্র। নতুন তালিকা সামনে আসতেই সদর ব্লকে আন্দোলন শুরু করেন করলাভ্যালী চা বাগানের শ্রমিকরা। সদর বিডিও কে স্মারকলিপি দেওয়ার পর কিছুদিন আগেই দীর্ঘক্ষণ ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখেন এই বাগানের চা শ্রমিকরা। উত্তর – পূর্ব ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দ্রুত সদর বিডিও নিজে বাগানে গিয়ে সরজমিনে শ্রমিক আবাসের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়ার পর অবরোধ তুলে নেন শ্রমিকরা। সেই সূত্র ধরেই সদর বিডিও এদিন বাগানে পৌঁছান। জলপাইগুড়ি সদর বিডিওকে কাছে পেয়ে বাগান শ্রমিকরা ক্ষোভ উগরে দেন । তারা জানান অরবিন্দ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ২০২২ সালের তালিকায় ১৯৩০ জনের নাম থাকলেও এবারে মাত্র ৯৭০ জনের নাম রয়েছে আবাসের তালিকায়।
এ প্রসঙ্গে অরবিন্দ গ্রাম পঞ্চায়েতের করলাভ্যালী চা বাগানের সিপিআই(এম) পঞ্চায়েত সদস্যা রুবিনা মুন্ডা জানান করলাভ্যালী চা বাগানে বসবাসকারী নাগরিকদের বেশিরভাগই চা বাগান শ্রমিক, যাদের বাগানে কাজ নেই তারাও বাগানের বাইরে শ্রমিকের কাজ করেন। এই এলাকার প্রায় ২৫০ টি পরিবারের বেশিরভাগের ঘর মাটি, বাঁশ ও টিন দিয়ে তৈরি। অনেকেই প্লাস্টিক টাঙিয়ে বসবাস করেন। ফলে প্রায় প্রত্যেক পরিবারই আবাস যোজনায় ঘরের টাকা পাবার যোগ্য। কিন্তু এ বছরের লিস্টে মাত্র ৩৩ জনের নাম রয়েছে। ফলে বাগান এলাকার শ্রমজীবী মানুষগুলোর মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বঞ্চিত শ্রমিক পরিবারগুলোর নাম যাতে আবাস তালিকায় থাকে তার ব্যবস্থা করতে হবে বলে এদিন সদর বিডিও- র কাছে দাবি জানান রুবিনা। বিডিও-র হাতে আবাস থেকে বঞ্চিত যোগ্য ১৭৯ জনের তালিকা তুলে দেন তারা।
বাগানে ঢোকার মুখে চড়কডাঙ্গি লাইনের দীর্ঘদিন ধরে ভাঙ্গা একটি কালভার্ট দ্রুত সংস্কারের দাবি সমস্ত উন্নয়ন আধিকারিকের কাছে তুলে ধরেন শ্রমিকরা। এই বাগানের শ্রমিক নেতা গোবিন ওরাওঁ জানান, বাগান শ্রমিকরা যদি সরকারি ঘর না পান তবে ঘর পাবার যোগ্যতা কি সেটা সরকারকে জানাতে হবে। বিডিও সাহেব বাগানে আসলেন , নিজে চোখে শ্রমিকদের ঘরগুলি দেখে গেলেন। তারপরেও পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে আরো বড় লড়াই হবে বলে জানান তিনি।
সদর বিডিও মিহির কর্মকার দ্রুত বাগান ছেড়ে বেরিয়ে যাবার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন , সমস্ত বিষয়টি তিনি জলপাইগুড়ির জেলা শাসককে অবহিত করবেন। যা বলার জেলাশাসক বলবেন।