কিংশুক ভট্টাচার্য: চিন্তন নিউজ:১৫ই এপ্রিল:- ভারতের কমিউনিষ্ট পার্টি(মাঃ) র রাজ্য কমিটির আহুত কর্মসূচির অঙ্গ স্বরূপ আজ বাঁকুড়া শহর পূর্ব এরিয়া কমিটি বিকেল ৪-৩০ মিনিটে রাজ্য সরকারের অনৈতিক কাজের ও জনগণের ন্যায়সংগত দাবীর ভিত্তিতে বিক্ষোভ সভার আহ্বান করেন।
বাঁকুড়া শহরের পূর্বাংশে লালবাজারের বাজার সংলগ্ন রাস্তার উপর এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সময়ের সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং এর সমস্ত নিয়ম মেনেই এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন শাখার কমরেডরা অংশগ্রহন করেন। সভা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন বাঁকুড়া জেলা কমিটির সদস্য তথা পূর্ব এরিয়া সম্পাদক প্রভাত কুসুম রায়। সভায় বক্তব্য পেশ করেন জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য তথা রাজ্য কমিটির সদস্য অভয় মুখার্জি। মুখার্জি বলেন আজ সকালে উক্ত দাবিসমূহ জেলা কমিটির পক্ষ থেকে জেলা শাসকের কাছেও উত্থাপন করা হয়েছে। তাঁর মাধ্যমে রাজ্য সরকারকে একথাও জানানো হয়েছে যে যদি অবিলম্বে এই সব দাবি গুলির সুস্থ সমাধান না হলে আরও বৃহত্তর আন্দোলনে নামতেও পার্টি পিছিয়ে আসবে না।
অভয় মুখার্জি এবং প্রভাত কুসুম রায় উভয়েই দাবিগুলি উপস্থিত কর্মী ও এলাকায় বিভিন্ন বাড়ির দরজা বা বারান্দার উপর দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের কাছে ব্যাখ্যা করেন। দাবিগুলি হলো ১) অবিলম্বে সমস্ত মানুষকে কার্ড নিরপেক্ষভাবে মাসে ন্যূনতম ৩৫কেজি খাদ্য সামগ্রী সরবরাহের ব্যাবস্থা সরকারকে করতে হবে। ২)অনেক মানুষ যাঁরা এপিএল কার্ডের মালিক বা বিভিন্ন কারনে কোন কার্ড হাতে পান নি কিন্ত এই অবস্থায় গুরুতর সমস্যায় ও খাদ্যসঙ্কটের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হচ্ছেন। এঁদের সবার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। ৩) পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরা ও চিকিৎসার সমস্ত ব্যবস্থা রাজ সরকারকে করতে হবে। ৪) সারা দেশের মধ্যে এই রাজ্যে টেষ্টিং অত্যন্ত কম। যেখানে কেরলে প্রতি লাখে ১৪/১৫ জনের পরীক্ষা করছে সেখানে এই রাজ্যে প্রতি লাখে মাত্র .১৩জনের টেষ্ট হচ্ছে, ডেথ সার্টিফিকেট চিকিৎসক দিতে পারছেন না। একটি বিশেষ বোর্ড দেবে। এটা সত্যি সংখ্যা গোপন করে এই রাজ্য সাফল্যের সাথে করোনা মোকাবিলা করছে প্রমাণ করতে তৎপর। অবিলম্বে এই ব্যাবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। ৫) এখন রাজ্যের মানুষকে এই কোভিড১৯ থেকে বাঁচাতে শুধু লকডাউন নয় দরকার টেষ্ট, টেষ্ট এবং টেষ্ট। ৬) অবিলম্বে সমস্ত মানুষের একাউন্টে কেন্দ্রীয় সরকারকে ৫০০০টাকা ও রাজ্য সরকারকে ২০০০টাকা পাঠাতে হবে। দাবি সমূহের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কমরেড অভয় মুখার্জি বলেন,যেখানে কেরালা করোনা মুক্ত রাজ্য হবার পথে সাফল্যের সাথে দ্রুত এগিয়ে চলেছে।
এমনকি হু, কেন্দ্র সরকার ‘ওয়াশিংটন পোষ্ট’ ঐ রাজ্য সরকারের প্রশংসা করে ঐ রাজ্যের মডেলে করোনা ভাইরাস মোকাবিলার উপদেশ দিচ্ছেন। সেখানে আমাদের রাজ্যসরকার আশ্চর্যজনকভাবে মিথ্যাচারের মধ্যে দিয়ে রাজ্যবাসী কে আরও বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। রাজ্যের মানুষ খাবার ও জীবিকার অনিশ্চয়তার কারনে ক্রমশ অধীর হয়ে উঠছেন এবং যা লকডাউন সঠিকভাবে সফল করার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। এই সমস্ত মানুষের সাথে মানবিক ও দায়িত্ব শীল ভূমিকা পালনে রাজ্য সরকারকে বাধ্য করাতে কমিউনিষ্ট পার্টির কর্মীদের ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে অংশগ্রহন করতে হবে। এই প্রসঙ্গ কমরেড প্রভাত কুসুম রায় বলেন যে রাজ্য সরকার করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা গোপন করতে গিয়ে বাঁকুড়া শহরকেও এক বিপদের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। গত তিনদিন আগে মেডিক্যাল কলেজে মৃত দুই ব্যাক্তিকে প্রাক্তন সভাধিপতি ও বাঁকুড়ার চেয়ারম্যান ও এক উঠতি তৃণমূল যুবনেতার উপস্থিতি তে রাতের অন্ধকারে বাঁকুড়া শ্মশানে দাহ করা হয়। তাঁদের পরিবারের হাতে দেহ তুলে না দিয়ে এবং পরিবারের সদস্যদের কোয়ারান্টাইনে পাঠিয়েও দাবি করা হয়েছে ঐ মৃতদেহগুলি কোনো করোনা ভাইরাস সংক্রামিত রোগীর নয়।
আবার গত ১৪/০৪/২০২০ রাত্রিতে পুনরায় একজন বাঁকাদহের ও একজন তালডাংরার বাসিন্দার মৃতদেহ তাঁদের পরিবারের হাতে তুলে না দিয়ে পরাতের অন্ধকারে পুলিশের উদ্যোগে দাহ কাজ করা হয়। এলাকার মানুষ এই কাজে সংগঠিত ভাবে প্রতিবাদ করলে বিশাল সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী নামিয়ে বিনা প্ররোচনায় শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ রত মানুষের উপর ঊন্মত্তের মতো লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভরতদের ছত্রভঙ্গ করে দাহ কাজ করা হয়। এই ধরনের ঘটনা কেন ঘটানো হচ্ছে প্রশ্ন তোলেন কমরেড প্রভাত। কমরেড অভয় ও কমরেড প্রভাত উভয়েই প্রশ্ন তোলেন যে মৃত্যু যদি স্বাভাবিক তবে দেহ কেন পরিবারের হাতে দেও আ হচ্ছে না? কেন রাতের অন্ধকারে পুলিশী হস্তক্ষেপে প্রশাসনকে শক্তি প্রয়োগ করে দাহ কাজ করতে হচ্ছে। তাঁরা এলাকার মানুষকে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি র উপর নজর রাখতে ও এই ধরনের অন্যায় রুখতে আরও দৃঢ়তার সাথে প্রতিরোধ করতে উদ্যোগী হতে হবে।