কিংশুক ভট্টাচার্য: চিন্তন নিউজ:২৩শে আগস্ট:- দীর্ঘ দুইহাজার এগারো সালের পর বাঁকুড়া শহর তথা জেলা জুড়ে বর্তমান শাসক দলের লাগাতার ভূমিকা এক সন্ত্রস্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে। ফল স্বরূপ সামগ্রিক ভাবেই জনগণের নিজস্ব দাবীতে আন্দোলনের ছন্দ পতন ঘটেছিল। এরইমধ্যে শহরের যুব আন্দোলনের অন্যতম প্রিয় ও দক্ষ সংগঠক ইন্দ্রজিৎ সিনহার আকস্মিক হৃদরোগে মৃত্যুর ফলে যুব আন্দোলন প্রায় স্তব্ধ অবস্থায় পৌছে যায়। কিন্তু তৎকালীন যুব কমিটিগুলির প্রচেষ্টা জারি ছিল। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনস্বার্থর পরিপন্থী কার্যকলাপের প্রতিবাদে অল্প কিছু যুবক বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু কর্মসূচী গ্রহনের প্রচেষ্টা গ্রহন করে গিয়েছিলেন। দুইহাজার ঊনিশের শেষ পর্যায়ে সংগঠনের জেলা সম্পাদক পরিকল্পনা করে শহরের সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহন করেন কয়েকজন প্রতিশ্রুতিমান উৎসাহী যুবককে সংগঠিত করে। পরবর্তী কালে করোনা মহামারীর জন্য লকডাউন পর্যায়ে সংগঠনের সর্বভারতীয় সম্পাদক বাঁকুড়ায় তাঁর বাড়িতে থাকতে বাধ্য হওয়ায় তাঁর সক্রিয় উপস্থিতি জেলা এবং জেলা শহরে সংগঠন সচল হয়ে ওঠে। “সরকারে নেই , দরকারে আছি” শ্লোগান নিয়ে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচীতে অংশগ্রহন ও আক্রান্ত সম্বলহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানো সমানভাবে চালিয়ে যায়। পেট্রোলিমের মূল্যবৃদ্ধির বিরোধীতা থেকে রাষ্ট্রায়ত্ব সম্পদ বিক্রি বা শ্রমিক বিরোধী আইনের বিরোধিতার প্রশ্নেই হোক অথবা, হাসপাতালে গিয়ে রক্তের অভাব মেটাতে নিজের শরীরের রক্ত দান ,রোগীদের ও আত্মীয়দের খাবার ব্যাবস্থা করা, এলাকা বিশুদ্ধিকরন বা গর্ভবতী মায়েদের হাতে পুষ্টিকর খাবারের প্যাকেট তুলে দেওয়ার প্রশ্ন, সব ক্ষেত্রেই যুব ফেডারেশনের কর্মীদের ঊজ্জ্বল উপস্থিতি সাধারন যুবকদের আকৃষ্ট করে নতুন করে। সমস্ত ভয় ভীতি কাটিয়ে তাঁরা যুব ফেডারেশনের সাথে যুক্ত হতে থাকেন আর কাটমানি র খোঁজে ব্যাস্ত থাকা শাসকদল ক্রমাগত কোনঠাসা হতে থাকে। জেলা জুড়েই এই ছবি চোখে পড়ছে। সোনামুখী শহরে তো যুবরা শুরু করছে লালমাটির রান্নাঘর। সেখানে মানুষের অকুন্ঠ সহায়তা আর যুবদের নিরলস প্রচেষ্টায় প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে দু’শ’ মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করছে যুব ফেডারেশনের কর্মীরা। যেখানে একদম গরীব মানুষ বিনা অর্থে ও সমর্থরা পনেরো টাকার মধ্যে দুপুরের খাবার পাচ্ছেন। খাবারের প্যাকেটে থাকছে প্রয়োজন মতো ভাত, ডাল, তরকারি এবং ডিম/মাছ/মাংস। এমনকি করোনা আক্রান্তের বাড়িতেও খাবার পৌছানর দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁরা।

যুবদের লাগাতার সক্রিয়তার ফলে আজ যুবরা আওয়াজ তুলছেন “যাদের দরকারে পাই/ তাদের সরকারে চাই।
মানুষের এই শ্লোগানকেই সামনে রেখে যুব সংগঠন তাঁদের গণতান্ত্রিক নীতি রীতিপদ্ধতি মতো একে একে বিভিন্ন আঞ্চলিক স্তরের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নিজেদের বিগত কাজকর্মের খোলামেলা আলোচনা, সমালোচনা ও পর্যালোচনার মধ্যদিয়ে নিজেদের ত্রুটিমুক্ত করার কাজ ও আগামীদিনের নেতৃত্ব নির্বাচনের কাজ শুরু করেছেন। সেই কর্মসূচির অংশস্বরূপ আজ শহরের পূর্ব আঞ্চলিক কমিটির কর্মীরা মিলিত হয়েছেন সম্মেলন মঞ্চে। কমরার মাঠ এলাকায় অবস্থিত মুটিয়া ভবনে তাদের সম্মেলন মঞ্চ। তাদের প্রিয় প্রয়াত নেতা ইন্দ্রজিৎ সিনহার নামে এই মঞ্চের নামকরন করে বিকেল চারটে থেকে অবিশ্রান্ত বর্ষনের মধ্যেও প্রায় পাঁচ ঘন্টা যাবৎ অধৈর্য না হয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার বিশ্লেষনের মধ্য দিয়ে সম্মেলন সম্পন্ন করেন।
ষাটজন প্রতিনিধি ভীষণ উদ্দীপনা ও দৃঢ়তার সাথে সম্মেলনে অংশগ্রহন করেন। সর্বভারতীয় সম্পাদক অভয় মুখার্জি সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন। সম্পাদকের প্রতিবেদন পেশ করেন সন্দীপ বিশ্বাস। পাঁচজন প্রতিনিধি আলোচনা করেন। জেলা সম্পাদক প্রদীপ পান্ডা ও জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য অভিক মিশ্র ও গণআন্দোলনের নেতৃত্ব প্রভাত কুসুম রায় সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য পেশ করেন। প্রতিনিধিদের আলোচনা শেষে আগামী দিনে সংগঠনের কাজ পরিচালনা করার জন্য সন্দীপ বিশ্বাসকে সম্পাদক, অভিজিৎ বিশ্বাসকে সভাপতি, সহসভাপতি মধূসুদন মুখার্জি ও অভিজিৎ মালাকার সহসম্পাদক চয়ন পান্ডে , সহসম্পাদক তথা যুবশক্তির দায়িত্বে রমিত ভট্টাচারিয়া ও কোষাধ্যক্ষ পদে জয়ন্ত গরাই সহ ঊনিশ জনের আঞ্চলিক কমিটি নির্বাচন করা হয়। আন্তর্জাতিক গেয়ে সম্মেলন শেষ করা হয়।
