দেবু রায়, চিন্তন নিউজ, ২৯ ফেব্রুয়ারি: বলশেভিক বিপ্লবের আগে রাশিয়ার সামাজিক অবস্থা আজকের রাশিয়ার মত ছিল না। অশিক্ষা, কুসংস্কার, গোঁড়ামি এবং অন্ধ ধর্মীয় গোঁড়ামিতে ডুবে থাকার জন্য তৎকালীন সময়ে রাশিয়ার সমাজ ছিলো অনগ্রসর। এই অনগ্রসর সমাজে অভিজাত শ্রেনী, মধ্যবিত্ত, কৃষক এবং শ্রমিক শ্রেনী ছিলো। তবে শিক্ষার প্রচুর সুযোগ না থাকার জন্য শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মানুষের সংখ্যা ছিলো অনেক কম।
সমসাময়িক সময়ে ইউরোপের থেকে রাশিয়াতে অশিক্ষিত মানুষের সংখ্যা ছিলো সবচেয়ে বেশি। রাজতন্ত্র কায়েম রাখতে জারেরা কখনোই চায়নি যে সাধারন মানুষ শিক্ষার সুযোগ পাক (যেমন আজকে আমাদের দেশের সরকার চাইছে)। অশিক্ষিত দেশবাসীর মধ্যে স্বাভাবিক ভাবেই নানা ধরনের কুসংস্কারের প্রভাব বা কুশিক্ষার প্রভাব বিস্তার করেছিল। সামাজিক দিক থেকে অধঃপতিত রুশরা যখন হতাশায় মুহ্যমান, ঠিক তখনি রাশিয়ার সাহিত্য প্রেমী বা সাহিত্যিকদের লেখা ও প্রচার কাজ মানুষের প্রাণে এক নতুন প্রেরনা যোগায়।
সেইসময় রাশিয়াতে শতকরা ২০ ভাগ ছিলো পোল, তুর্কি, জর্জিও উক্রেনিও সহ নানা জাতি গোষ্ঠীর মানুষ। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে জার সরকার ঐ উপজাতিদের উপর রুশ ভাষা, সংস্কৃতি এবং কৃষ্টি চাপিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, অ-রুশ নাগরিকদের উপর সরকার তিন গুন বেশি কর (ট্যাক্স) চাপিয়েছিলো। কিন্তু জারদের এই রুশীকরণ নীতির বিরুদ্ধে প্রবল বিক্ষোভ শুরু হয়। এর ফলে অ-রুশ জাতি গুলো নিজেদের সত্তাকে বজায় রাখতে বা নিজেদের সতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে জার রাজাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামে।
এই সময় গোগোল, পুশকিন, ম্যাক্সিমগরকি, টলস্টয়, তুর্গেনিথ প্রমুখ রুশ সাহিত্যিকরা তাঁদের রচনার মধ্যে জারতন্ত্রের স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার স্বরূপ তুলে ধরতে থাকেন। এর ফলে জারতন্ত্রের বিরুদ্ধে জন মানুষের মনে বিরাট ঘৃণার সঞ্চার হতে থাকে। মিখায়েল বুকাননের নৈরাজ্যবাদ এবং কার্ল মার্ক্সের সমাজতন্ত্রবাদ জন সাধারণের মধ্যে নতুন চেতনার সঞ্চার ঘটায়। সাধারন মানুষ বিপ্লবমুখী হয়ে উঠে। তার সাথে লেনিনের বলশেভিক পার্টি মানুষের সাথে সংযোগ এবং তার সুযোগ্য নেতৃত্ব মানুষকে আকর্ষণ করে। এর সাথে তৈরি হতে থাকে সমাজতন্ত্রের প্ৰতি মানুষের আকর্ষণ।