জেলা

জলপাইগুড়ি জেলার চা শ্রমিক আন্দোলনের বর্ষীয়ান নেতা বাবুলাল গোপ এর জীবনাবসান


সঞ্জিত দে- চিন্তন নিউজ-৩রা জুলাই- জলপাইগুড়ি জেলার সি পি আই ( এম) সম্পাদক মন্ডলীর প্রাক্তন সদস্য বর্তমানে জেলা কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য জেলার চা শ্রমিক আন্দোলনের বর্ষীয়ান নেতা বাবুলাল গোপ অসুস্থতা জনিত কারনে শনিবার সকালে জীবনাবসান ঘটে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। এই মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই জেলার সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। বিশেষ করে ডুয়ার্সের সমস্ত চা বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে এই শোক ছড়িয়ে পড়ে।দীর্ঘ ৫২ বছর ধরে ত্যাগ ও নিষ্ঠার সাথে আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে কমরেড বাবুলাল গোপ চাশ্রমিকদের জন্য লড়াই করে গেছেন।চা বাগান সংলগ্ন গ্রামীণ কৃষি এলাকার কৃষক দের জন্য তিনি আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। ভারত ভুটান সীমান্তের চা বাগান চামুর্চি বাগানের বাংলো কর্মী হিসেবে কর্মরত থাকার সময় তিনি লাল ঝান্ডার প্রতি আকৃষ্ট হন।১৯৬৯ সালে চা বাগান মালিক পক্ষ যখন শ্রমিকদের উপর নানা ধরনের দমন নীপিড়ন নির্যাতন শুরু করেন বাবুলাল গোপ রুখে দাঁড়ান। এই বছরেই ১৭ এবং ১৮ সেপ্টেম্বর রাতের অন্ধকারে চা বাগান মালিক পক্ষের নির্দেশে দুস্কৃতিরা চা শ্রমিকদের উপর হামলা শুরু করে এবং হোসেন আলি সর্দার নামে এক শ্রমিক নৃশংস ভাবে খুন হয়ে যান বহু শ্রমিক আহত হন সে সময় বাবুলাল গোপের নেতৃত্বে শক্তিশালী আন্দোলন হয়। শ্রমিকদের আন্দোলনের চেহারা দেখে মালিক পক্ষের বাগান ম্যানেজার সহ অনান্য কর্মীরা পালিয়ে যায়।বাবুলাল গোপের নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা দেখে এবং তার উপর চা শ্রমিকদের অগাধ আস্থা বিশ্বাস দেখে জেলার অবিসংবাদী পার্টি নেতা সুবোধ সেন চা শ্রমিক আন্দোলনের অন্যতম নেতা মানিক সান্যাল বাবুলাল গোপ কে পার্টিতে নিয়ে আসেন।১৯৭১ সালে কমরেড বাবুলাল গোপ পার্টি সভ্যপদ লাভ করেন এবং সর্বক্ষণের কর্মী হিসেবে নিযুক্ত হন।মৃত্যুর সময় পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করে গেছেন।চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের জেলা নেতা হয়েও সি আই টি ইউয়ের অনান্য শ্রমিক সংগঠন গড়া এবং পার্টি সংগঠন বিস্তারে আত্মনিয়োগ করেন।জেলার সব চা বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে তার ব্যাপক পরিচিতি গড়ে ওঠে।অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলার সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য ছিলেন।পার্টির জোনাল স্তর গঠনের প্রকৃয়ার সময় নাগ্রাকাটা ধূপগুড়ি মিলে একটা জোনাল গঠন হলে বাবুলাল গোপ তার সম্পাদক হন।পরে দুটি পৃথক জোনাল গঠন করা হয়।গত ৯ জুন তার সাধারণ অসুস্থতা নিয়ে জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। এখানে পরীক্ষায় করোনা ধরা পরলে তাকে কোভিড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।অসুস্থতা বেড়ে গেলে জলপাইগুড়ি সদরের রেড ভলান্টিয়ার সদস্যরা তাকে নিয়ে গিয়ে উত্তর বঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করেন।গত ২৭ জুন দীর্ঘ লড়াইয়ে তিনি করোনাকে হারিয়ে রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।চিকিৎসক দের পরামর্শ মেনে আরও কিছুদিনের জন্য এখানেই চিকিৎসা চলছিল।শনিবার দুপুরে তার মরদেহ জলপাইগুড়ি জেলা পার্টি অফিসে আনা হলে জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য সি আই টি ইউ জেলা সম্পাদক পার্টির রাজ্য সম্পাদক সদস্য জিয়াউল আলম সহ জেলা সম্পাদক মন্ডলীর ও জেলা কমিটির বিভিন্ন নেতৃত্ব এরয়া কমিটির নেতৃত্ব বিভিন্ন গনসংগঠনের নেতৃত্ব শ্রদ্ধা জানান। সলিল আচার্য, জিয়াউল আলম সহ অনেক নেতৃত্ব বাবুলাল গোপের মরদেহ সাথে নিয়ে চালসা নাগরাকাটা বানারহাট পার্টি অফিসে নিয়ে যান।সব স্থানেই কোভিড বিধি মেনে পার্টি নেতৃত্ব চা শ্রমিক নেতৃত্ব সহ অনান্য সংগঠনের নেতা কর্মি সাধারণ চা শ্রমিক শ্রদ্ধা জানান। বিকালে চামুর্চি চাবাগানের গুদাম লাইনে বাসভবনে নিয়ে যাবার পর দল মত নির্বিশেষে সমস্ত চা শ্রমিক সহ প্রচুর সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধা জানান। চামুর্চিতেই কমরেড বাবুলাল গোপের শেষ কৃত্য সম্পন্ন হয়।পার্টির জেলা রাজ্য নেতৃত্বের উপস্থিতিতে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।