রোহন ঘোষ, নিজস্ব প্রতিবেদন: চিন্তন নিউজ: ০৭/০৯/২৩:– বেশ কিছু বছর হল একটি কথা ব্যাপকভাবে প্রচার পেয়েছে। তা হল সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান ভালো না, বা পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে বাংলা মিডিয়ামে লেখাপড়ার মান পড়ে গেছে। তাই বেসরকারি স্কুলগুলির প্রতি সাধারণ মানুষ নিরুপায় ভাবে তাদের সন্তানদের স্বার্থে তীব্র দারিদ্রতার মধ্যেও ব্যাপক খরচ বহন করছে।
কিন্তু প্রশ্ন হল আমাদের নির্বাচিত সরকারগুলি। এই বিষয়ে উদাসীন কেন? বা বলা যায় প্রতিবছর শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া কার্যকর হচ্ছে না কেন? এর পিছনে উদ্দেশ্যই বা কি?
আসলে সমগ্র দেশের পুঁজিপতিদের স্বার্থান্বেষী সরকার বেশিরভাগ সরকারি সংস্থাগুলি বেসরকারি মালিকদের হাতে তুলে দিলেও শিক্ষা ক্ষেত্রে সহজে তা করতে পারছে না। বা বলা যায় সাহস সঞ্চয় করতে পারছ না, কারণ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী ভারতবর্ষের বেশিরভাগ মানুষ।
তার মানে এই নয় যে সরকার কোনভাবেই এই সমস্ত মানুষের কথা ভেবে চিন্তিত। আসল কথা হ’ল একেবারে বেসরকারীকরণ শিক্ষা ক্ষেত্রে নেমে এলে দেশে আগুন জ্বলে যাবে। মানুষ পথে নামবে এবং সবশেষে ধ্বংস হবে পুঁজিবাদীদের অঙ্গুলি হেলনে চলা এই সরকার।
তাই কৌশলটি একটু অন্যরকম । প্রথমত কিছুদিন আগে লক্ষ্য করবেন রাজ্যের দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার হঠাৎই বেসরকারি স্কুলগুলিকে নিয়ে চিন্তা ব্যক্ত করে। হঠাৎ বলে ওঠে এই সমস্ত স্কুল বেশি করে ফিস নিচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হল মানুষ বেসরকারিতে যাচ্ছে কেন? যখন সরকারি স্কুলগুলি মিড ডে মিল, বই খাতা, পোশাক প্রভৃতি ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে তুলে দিচ্ছে।
আসল কথা হচ্ছে শিক্ষার গুণমান,
আজ লক্ষ্য করলে দেখা যায় বেশিরভাগ বিষয়গুলি পাঠ্যক্রম থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে, শিশুরা কি শিখবে? এই চিন্তায় কিছু সচেতন বা স্বচ্ছল পরিবারগুলি প্রথমেই সরকারি স্কুল থেকে মুখ ফিরিয়েছে। এরপর পড়ে থাকে দরিদ্র পরিবার গুলি যাদের সরকারি বিদ্যালয় ছাড়া তাদের সন্তানদের লেখাপড়া শেখানোর কোন রাস্তা নেই তাই তাদেরকে স্কুল বিমুখ করার জন্য যোগ্য শিক্ষা প্রার্থীদের চাকরি না দিয়ে কিছু অযোগ্য দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের স্কুলে নিয়োগ। আর তাদের কিছু বছরের শিক্ষাদান বুঝিয়ে দিল সরকারি স্কুলের লেখাপড়া অত্যন্ত নিম্নমানের।এছাড়াও পুঁজিবাদের আগ্রাসনে খাদ্য, বস্ত্রের দাম যেখানে চরম ঊর্ধ্বমুখী সেখানে দারিদ্র্য সীমা নিচে বসবাসকারী মানুষ শিশুদের কিভাবেই বা লেখাপড়া শেখাবে। বেলাগাম স্কুল ছুটি শিক্ষার্থীদের মনে বিশেষত প্রাথমিক স্তরে লেখাপড়ায় অনীহা তৈরি করেছে। বাড়িতে দুইটি সন্তান থাকলে কোনক্রমে একজনে লেখাপড়া উচ্চ প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত হলেও অন্য জনকে কাজে বেরোতে হচ্ছে তাও শিশু বয়স থেকে।
এরপর বাকি থাকে সেই সমস্ত শিক্ষার্থীদের বেসরকারি স্কুল মুখি করা, তাই বিভিন্ন রাজ্য সরকার বেসরকারি স্কুল গুলির ফিস্ কমানো বা সরকারিভাবে অনুদান ঘোষণা করছে আসলে এরপর মানুষ যখন তাদের সঞ্চয় টুকু এই সমস্ত বেসরকারি স্কুলগুলিতে খরচ করবে তখন সরকারি স্কুলগুলির ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কম এই বলে সেগুলিকে চিরতরে বন্ধ করে বা কিছুদিন পর সেগুলিকে বৃহৎ পুঁজিপতিদের হাতে বিক্রি করে দেওয়া হবে এবং এর পরবর্তীতে সরকার যখন সেই সমস্ত বেসরকারি স্কুল থেকে তাদের সহযোগিতা তুলে নেবে তখন তারাও তাদের ফিস্ বৃদ্ধি করবে। এরপর মানুষ নিরুপায় হয়ে যখন সরকারি স্কুলগুলিতে তাদের সন্তানদের পাঠাতে চায়বে তখন হয়তো আর কোন সরকারি স্কুলের অস্তিত্ব থাকবে না। সেখানে হয়তো লেখা থাকবে আদানি,আম্বানি প্রাইভেট স্কুল তাদের সেই সমস্ত স্কুলের মাসিক ফিস্ হতে পারে বর্তমান সময়ের বাজারদর অনুযায়ী পাঁচ হাজারের বেশি, যা সেই সময় আরো বৃদ্ধি পাবে।
একটি সময় ছিল যখন বাম সরকার পশ্চিমবঙ্গে বা পশ্চিমবঙ্গকে মডেল করে সমগ্র দেশে খাদ্য এবং পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য অর্থ সহযোগে শিক্ষাদান চালু করেছিল যা আজকে তৃণমূল-বিজেপির মত কিছু রাজনৈতিক দলের নির্বাচন প্রচার যা তারা তাদের নাম দিয়ে প্রচার করে। যাইহোক এই সমস্ত খরচও এখন আর এই সরকার বহন করতে চাইছে না তাই এই কৌশল।
আজ একটা কথা বলে রাখা ভালো, আজ হয়তো এই সমস্ত কথা রাজনৈতিক দৃষ্টিতে অনেকে দেখবে, অনেকে ভাববেন এসব রাজনৈতিক কথাবার্তা বা রাজনীতিতে সুবিধা পাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। কিন্তু একটি বিষয় লক্ষ্য করবেন আজ পর্যন্ত বামপন্থী সচেতন ব্যক্তিরা রাষ্ট্র সম্পর্কে যা কিছুই বলেছেন তার ১০০% সত্যি হয়েছে। এই উদারনৈতিক দেশ শাসনে নীতি ও পুঁজিপতিদের ব্যাপক বাজার দখলের যুগে।