সূপর্ণা রায়: চিন্তন নিউজ:১৭ই ফেব্রুয়ারি:– অস্ট্রেলিয়ার দহন আগামীর অশনিসংকেত_ঝলসে যাওয়া লাল আভা।দক্ষিনপূর্ব অস্ট্রেলিয়ার আকাশে এখন এমনই অদ্ভুত আলো।। বনাঞ্চল পূড়ে খাক।প্রান গেছে একশো কোটি প্রানীর।।পথের পাশে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ক্যাঙারু।। উদ্ধারকর্মীর পা জড়িয়ে ধরে আছে তৃষ্ণার্ত কোয়েলা।।দাবানলের প্রান হারিয়েছেন বহু মানুষ আর গৃহহীন হয়েছেন দশ হাজার এর বেশী মানুষ।। আগুন লেগে শহরের প্রবেশ পথ বন্ধ হওয়ার দরুন মানুষ দিশাহারা হয়ে হেলিকপ্টার বা জলযানের খোঁজে সমুদ্র সৈকতে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন।। প্রাণহানি, বনজসম্পদ নষ্ট, প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি সব মিলিয়ে কার্যত বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়ার এই দূর্যোগ।। রাস্তা ঘাট শুনশান।দমবন্ধ এক পরিবেশ চারপাশে।। জেগে রয়েছে ওই অদ্ভুত ওই লাল।।
গত সেপ্টেম্বর থেকে জ্বলছে দক্ষিণ পূর্ব অস্ট্রেলিয়া। দাবানলের প্রকোপে সিডনির আকাশ ধোঁয়ায় কখনো ছাইয়ে ঢেকে যাচ্ছে।। সিডনি থেকে ১৫০ কিমি দূরের শহরে নিউক্যাসলের আকাশ গনগনে লাল।। ধোঁয়া ভরা আকাশে ছন্নছাড়া পাখী ডানা ঝাপটাচ্ছে।। যদি সুলেমান বাদশার মতো আমরা পশুপাখির ভাষা বুঝতে পারতাম, তাহলে হয়তো শুনতাম শুধুমাত্র একটাই চিৎকার, বাঁঁচাও বাঁচাও।।
মানুষ পাখীদের ভাষা না বুঝলেও একটি পাখী বুঝতে পেরেছিল মানুষের ভাষা।।সেই ভাষায় সে মানুষের দরজার কাছে একটানা ডেকে গেছে।।ভেবেছে , মানুষ বোধহয় তাদের বাঁচাতে পারবে নেভাতে পারবে বনের আগুন।। তার ডাকের সুরটা দমকলের সাইরেন এর মতো।। অস্ট্রেলিয়ার ওই ম্যাগপাই পাখী শালিক পাখির ডাক ও অনুকরণ করতে পারে। সেই পাখীর আকুল করা সাহায্যের সুরে মন থমকে যায়।। অস্ট্রেলিয়ায় আগুন লাগলে অল্প সময়ের মধ্যে দাবানলের চেহারা নেয়।। শুধু হাওয়া যে আগুন ছড়ায় তা নয়।। আগুনের মধ্যে তৈরি হয় শূন্যতা যার মধ্যে আগুন ঢুকে তৈরি হয় ঘূর্ণির। অনেকটা টর্পেডোর মতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে তখন।।
জলবায়ু পরিবর্তন এই দূর্যোগের অন্যতম কারণ।।এই গ্রীষ্মে অস্ট্রেলিয়ার তাপমাত্রা রেকর্ড তৈরি করেছে অন্যান্য বছর এর তুলনায়।। শুধুমাত্র একটা বছর এমন তাপমাত্রা বেড়েছে এমন ঘটনা হলে ভাবনা কিছুটা কমতো।। কিন্তু এমন ঘটনা দীর্ঘ সময় ধরে চলছে আর তার সাথে যোগ হয়েছে কম বৃষ্টিপাত।। প্রচন্ড গরম আর অনাবৃষ্টি এর প্রভাব এ মাটি ও উদ্ভিদ শুকিয়ে উঠেছে যা দাবানলের প্রাকৃতিক ইন্ধন।।এরই মধ্যে আরও একটি বিপদ সংকেত দিয়েছে নাসা।।তারা জানিয়েছে কয়েকমাস ধরে চলা দাবানলের ধোঁয়া শীঘ্রই গোটা বিশ্ব ঘুরে আবার আবার অস্ট্রেলিয়া তেই ফিরে যাবে।।এই দাবানলের ধোঁয়া অন্তত একবার বিশ্বপ্রদক্ষিন করবে।। নাসার গবেষকেরা এমন ই বিপদবার্তা দিয়েছেন।।
ইতিমধ্যে দাবানলের ধোঁয়া প্রশান্ত মহাসাগরে পৌঁছে গেছে।। নতুন বছরের শুরুতে এই দাবানলের ধোঁয়া যখন লাতিন আমেরিকা অতিক্রম করে তখন সেই সব দেশের আকাশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ছিল।। দাবানলের ধোঁয়া ৮ ই জানুয়ারি বিশ্বের অর্ধেক এলাকার প্রদক্ষিণ শেষ করেছে।।নাসা জানিয়েছে দাবানলের ধোঁয়া ১৭’৭ কিমি উঁচুতে উঠে গেছে।। দাবানলের ধোঁয়া এখন বায়ুর দ্বিতীয় স্তর স্ট্রাটোমন্ডলে পৌঁছে গেছে।। স্ট্রাটোমন্ডলে একবার ধোঁয়া পৌঁছাতে পারলে তা হাজার হাজার মাইল অতি দ্রুত অতিক্রম করবে এবং বিশ্বের বায়ুমণ্ডলের পরিস্থিতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।। ব্রিটেনের গবেষকরা জানিয়েছেন উষ্ণতর বিশ্বে অর্থাৎ ভবিষ্যতে তাপমাত্রা বাড়লে জলবায়ু কি ভীষণ সংকটের মধ্যে দিয়ে যাবে গোটা বিশ্ব তার পূর্বলক্ষণ অস্ট্রেলিয়ার এই দাবানল হতে পারে অর্থাৎ দাবানল তখন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হবে।।
সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য “”ক্লাইমেট অ্যাকশন”” আন্দোলনে নেমেছে।।সেই ছোট্ট মেয়েটি রাষ্ট্রসঙ্ঘের অধিবেশনে তীক্ষ্ণ গলায় পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য যে ডাক দিয়েছিল,তার সঙ্গে অষ্ট্রেলিয়ার ম্যাগপাই পাখীর করুন কান্নার কি কোন মিল আছে????? দুজনে ই প্রকৃতির সন্তান।। ম্যাগপাই পাখীটির ডাক শুনে মনে হয়েছে ওটা কোনো পাখী নয় ,সে জেন কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ। ভালোবাসার পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য যারা মানুষকে জেগে উঠতে বলছে এখনই।_