রাজ্য

খোদ রাজ্য পর্যটন মন্ত্রী কারণে দুশো কোটি টাকার বিনিয়োগ গুটিয়ে রাজ্য ছাড়ার হুমকি দিলেন শিল্পপতি।


মল্লিকা গাঙ্গুলি:চিন্তন নিউজ:১৪ই সেপ্টেম্বর:–শিলিগুড়ি সংলগ্ন ফুলবাড়িতে ২০০৯ সালে গড়ে ওঠে গ্রিনজেন বায়ো প্রায়ভেট লিমিটেড নামক পরিবেশ বান্ধব একটি শিল্প। সংস্থার কর্ণধার শিল্পোদ্যোগী রমাকান্ত বর্মন। এই কারখানায় উত্তর বঙ্গের আটটি জেলার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের বর্জ্য পদার্থ জমা করে তা প্রক্রিয়াকরনের ব্যবস্থা করা হয়। ২০০৯ সালে ফুলবাড়ি কারখানা ছাড়াও সংস্থার কলকাতায় একটি চালু কারখানা এবং আরও আটটি এরকম কারখানাকে উপোযোগী তৈরির কাজ চলছে। সব মিলিয়ে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টাকা! এবং হাজারের ও বেশি মানুষের রুটি রুজির সংস্থান। এই সংস্থা অতি আধুনিক পদ্ধতিতে বর্জ্য প্রক্রিয়া করণের কাজ করে। শুধু ফুলবাড়ির কারখানা থেকেই প্রতিদিন সংস্থার ২০ টি গাড়ি প্রায় চার টন বর্জ্য সংগ্রহ করে তার যথাযথ ব্যবস্থা করে। সংগৃহীত বর্জ্য ৪৮ ঘন্টার মধ্যে নষ্ট করতে না পারলে যে পরিমাণ দূষণ ছড়াবে তা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

এই রকম একটি সংস্থা আজ বিষম সমস্যার সম্মুখীন! কর্ণধার রমাকান্ত বাবুর দাবি, বাম আমলে ব্যবসা করতে এসে এ পর্যন্ত তাঁরা কোনো অসুবিধায় পড়েন নি কিন্তু সম্প্রতি শিলিগুড়ির কারখানায় গত ১০ই সেপ্টেম্বর থেকে যে সমস্যা তৈরি করা হয়েছে তাতে তিনি শঙ্কিত এবং সন্ত্রস্ত। শিল্পপতির দাবি- রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতমদেব শেয়ারহোল্ডার দের দিয়ে কারখানা কবজা করার চক্রান্ত করছেন। গত বৃহস্পতিবার তার ভাই শশীকান্ত বর্মন এবং কারখানার এক সুপারভাইজার মনিকান্ত রায়কে অপহরণ করে আমবাড়ি তে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধোর করার ঘটনায় রমাকান্ত বাবু ভীত এবং ক্ষুব্ধ।রমাকান্ত বাবু জানান তিনি সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের আশ্বাসে শিলিগুড়ি কারখানা চালাচ্ছেন। কিন্তু তার দলেরই মন্ত্রী শিল্প ধ্বংসের যে ভূমিকা নিয়েছেন , তা দেশের শিল্প মহলে নেতিবাচক বার্তা যাবে। পর্যটন মন্ত্রী পুলিশকে নিষ্ক্রিয় রেখে দুষ্কৃতীদের দিয়ে কারখানা দখল নিচ্ছেন। মন্ত্রী গৌতমদেবকে সরাসরি কাঠগড়ায় তুলে শিল্পপতি অভিযোগ করছেন, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে মন্ত্রী দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব চালাতে মদত দিচ্ছেন। পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে দিচ্ছেন না। তিনি অন্যায় ভাবে শেয়ার হোল্ডার দিয়ে কারখানা দখল নিতে চাইছেন। একদিকে মুখ্যমন্ত্রী শিল্প গড়তে বলছেন, অপর দিকে তারই মন্ত্রী সভার বিশিষ্ট মন্ত্রীর এহেন উল্টো ভূমিকা কেন এই প্রশ্ন তোলেন রমাকান্ত বর্মন।

সমস্ত বিষয় জানিয়ে শিল্পপতি মুখ্যমন্ত্রী ও সাংসদের কাছে অভিযোগ জানিয়ে বলেন প্রশাসন দ্রুত সমস্যা সমাধান না করলে শুধু ফুলবাড়ি নয়, রাজ্যের সমস্ত কারখানা বন্ধ করে দেবেন। এবং তা করলে যে ভয়ংকর দূষণ এবং মারাত্মক সংক্রমণের বিপদ রয়েছে তার সমস্ত দায় নিতে হবে পর্যটন মন্ত্রী গৌতমদেবকে! গৌতমদেব শিল্পমন্ত্রী না হয়েও তার শিল্পে নাক গলানো নিয়ে তিনি প্রশ্ন করেছেন। এ ব্যাপারে মন্ত্রী গৌতমদেব কে প্রশ্ন করা হলে তিনি মুখ খুলতে চাননি। তিনি বলেন, “পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে আমি কোনো মন্তব্য করবো না”! স্বয়ং পরিবেশ মন্ত্রী হয়ে শিল্প সামাজিক এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করার এই অপচেষ্টা গ্রহন করা যায় না। সারা বিশ্ব যখন দূষণ নিয়ন্ত্রণকে মিশন হিসেবে নিয়েছে তখন এরকম একটি সংস্থা বন্ধ করে দেওয়ার চক্রান্ত কেবলমাত্র ঐ শিল্পোদ্যোগীর ব্যবসায়িক ক্ষতি করা নয়, রাজ্য তথা দেশের মানুষের জীবনকে এক ভয়াবহ সংক্রমণের দিকে ঠেলে দেওয়া।

বর্তমান রাজ্য সরকারের শিল্প চেতনার নজির প্রতিদিনই প্রকট হয়ে পড়ছে! সিঙ্গুরে টাটা কারখানা গড়তে না দেওয়ার ফল আজ রাজ্যবাসী হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। আবার রমাকান্ত বাবুর সংস্থা রাজ্য ছেড়ে ভিন রাজ্যে চলে গেলে আরো একবার বেকারদের কর্ম সংস্থান যেমন নষ্ট হবে তেমনি এর ফলে মাত্রাহীন পরিবেশ দূষণ রাজবাসীর জীবন সংশয় সৃষ্টি করবে! সব থেকে বড় কথা শিল্প স্থাপনের সমস্ত রকম অনুকূল পরিবেশ এবং শিল্প মহল আগ্রহী হওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র প্রশাসনিক ত্রুটি বর্তমান রাজ্য সরকারের দুষ্কৃতীরাজ এই রাজ্যের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়! সারা বিশ্বের শিল্প বাজারে পশ্চিমবঙ্গ একটি কালো রাজ্য, BLACK STATE রূপে চিহ্নিত। সাম্প্রতিক ফুলবাড়ির গ্রিনজেন বায়ো প্রায়ভেট লিমিটেড সংস্থার পরিস্থিতি পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জীবন জীবিকা স্বাস্থ্য সংস্কৃতিকে বিপন্ন করে তুলেছে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।