প্রতিবেদনে গোপা মুখার্জী: চিন্তন নিউজ:১০/১০/২০২২:– ২০২২ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন ফরাসি লেখিকা অ্যানি এরনো।গত বৃহস্পতিবার (06/10/2022) রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি সাহিত্যে ১১৯ তম নোবেল জয়ী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করে ।
আগাগোড়া তাঁর লেখা যেন পুরুষতন্ত্রকে ঝলসে দেওয়ার অগ্নিমন্ত্র। শুধুমাত্র মেয়েদের হয়ে কথা বলার কারণেই সাহিত্য জগতে তিনি স্বতন্ত্রতা লাভ করেছেন তা কিন্ত নয়,বিভিন্ন আঙ্গিক নিয়েও চলেছে তাঁর নিরন্তর পরীক্ষা নিরীক্ষা। জীবনের নানা জটিল টানাপোড়েন তিনি সযত্নে তুলে ধরেছেন তাঁর লেখায়।
অ্যানি এরনো, যাঁকে বলা হয় ‘ প্রস্ত ও চেকভের যৌথতার সন্তান ‘ —- তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪০সালে নরম্যান্ডির ছোট্ট শহর ইভেটোয়। ১৯৭৪ সালে লেখিকা হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ। এবং তারপর থেকেই দুর্বার গতিতে তিনি লিখে চলেছেন।
মূলত আত্মজীবনী মূলক উপন্যাস রচনায় তিনি সিদ্ধহস্ত। এরনোর প্রথম জীবনে লেখা দুটি উপন্যাস ‘ক্লিনড আউট’ ও ‘ ডু হোয়াট দে সে অর এলস্ ‘-এ তিনি নারীর বঞ্চনা ,লাঞ্ছনা ও অসহায়তার কথা বর্ননা করেছেন ঠিকই কিন্ত তার পরবর্তী রচনাতেই সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে পুরুষতন্ত্রের সমূহ অনাচারকে পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে তুলে ধরেছেন। তাঁর লেখনী থেকে নির্ঝরিত হয়েছে আগুন যা পুরুষতন্ত্রকে দগ্ধ করেছে। এরকমই একটি উপন্যাস হল ‘ এ ফ্রোজেন উওম্যান ‘।নাতিদীর্ঘ এই উপন্যাসে তিনি ব্যক্ত করেছেন নারী শুধু পুরুষের কাছে ” প্রত্যাশা পূরণের যন্ত্র “মাত্র। সর্বদেশের সর্বকালের উচ্চ শিক্ষিত, মেধাবী নারীও সংসারের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে নিজ স্বত্তা বিসর্জন দিয়ে শেষ পর্যন্ত পরিণত হয়েছে শুধুমাত্র গৃহবধূ, স্ত্রী ও মা হিসেবে ।যেখানে প্রতিনিয়ত পুরুষ তাকে শাসন করে চলেছে,অবদমিত করে রেখেছে ।এমনকি ‘বেশ্যা’ বলতেও কুন্ঠাবোধ করেনি ।
সাম্প্রতিককালে তাঁর লেখা ‘ এ গার্লস স্টোরি ‘ তে তিনি একজন প্রতিবাদী লেখিকা। সেই সঙ্গে মেয়েদের মধ্যে প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলার কথাও বলেছেন তিনি । এরনো বলেছেন, ‘ নিত্য নতুন আবিষ্কার করাই লেখকের ধর্ম। ‘ তিনি তাঁর স্মৃতি থেকে সংগ্রহ করেছেন অনেক বিস্মৃতপ্রায় অধ্যায়, যেগুলি তাঁর লেখায় ছবি হয়ে ফুটে উঠেছে। এরনোর স্বীকারোক্তি–” আমি কিছু স্মরণ করার চেষ্টা করছি না,শুধু স্মৃতির ভিতরে ঢুকতে চাইছি ।”
১৯৮৮ তে প্যারিসে এক বিবাহিত রুশ কূটনীতিকের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয়। কিছুদিন পরেই তিনি বুঝতে পারেন সেই বিবাহিত পুরুষ তাঁকে ব্যবহার করেছিল মাত্র। তাঁর জীবনের সেই দুঃসহ সময়ের কথা তিনি তুলে ধরেছেন ‘গেটিং লস্ট’ উপন্যাসে ।এখানে এসেই তাঁর উপলব্ধি , পুরুষ মাত্রই শরীর সর্বস্ব। নারীবাদী লেখিকা অ্যানি গর্ভপাতের অধিকার নিয়েও ছিলেন সোচ্চার। তখন ফ্রান্সে গর্ভপাত বৈধ ছিল না।( 1963–64) এরনো দাবী করেছেন, একজন কথাসাহিত্যিকের পরিবর্তে তিনি নিজেই ” নিজের নৃতাত্ত্বিক। “
৮২ বছর বয়সী এই লেখিকার সৃষ্টিসম্ভারের মধ্যে বেশিরভাগই আত্মজীবনীমূলক। অসম্ভব সাহসিকতা,ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে ব্যক্তিগত স্মৃতির শেকড় সন্ধান, বিরহ-বিচ্ছেদ, সামগ্রিক সংযমের বিষয়টিকে তিনি সুস্পষ্ট ভাবে তুলে ধরেছেন তাঁর লেখায়-‐—-এখানেই তাঁর নিজস্বতা। ” বেঁচে থাকা মানেই তো তৃষ্ণা ছাড়াই নিজেকে নিঃশেষিত করা”——বলেছেন নোবেল জয়ী অ্যানি এরনো।