রাজনৈতিক

বিকল্প…. ‘সমাজতন্ত্র’


অমিতাভ সিং:চিন্তন নিউজ:৯ইমে:- আপনারা জানেন আজ ৯ ই মে ২০২০, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের ৭৫-তম বার্ষিকী। ৭৫ বছর আগে আজকের দিনেই রাইখস্ট্যাগে লাল পতাকা উড়েছিল। ৭ কোটি মানুষের রক্তের বিনিময়ে। ইতিহাসে লেখা আছে নাৎসী কনসেনট্রেশন ক্যাম্প। তারপর ব্যাঙ্কারে হিটলারের আত্মহত্যা। ইতিহাসের পাতায় ফিরে গেলে জানা যায়, সারা পৃথিবী যখন বিশ্বত্রাসী হিটলারের ভয়ে কাঁপছে, নাৎসি জার্মানির বিজয়ী ফৌজ একটার পর একটা দেশ দখল করে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। যে ম্যাজিনো লাইন নিয়ে অহঙ্কারের শেষ ছিল না, সেই ম্যাজিনো লাইনে হিটলারের বাহিনীর কাছে চুড়ান্ত নাকাল হয়ে জীবন বাঁচাতে পিঠ দেখিয়ে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী রনক্ষেত্র থেকে দৌড়ে পালাচ্ছে। এ এক লজ্জাজনক অধ্যায়, হিটলারের ভয়ে এই ভীরুর মতো পলায়নকে ইংরেজরা বুক ফুলিয়ে নির্লজ্জের মতো বলে “গৌরবময় পশ্চাৎ অপসারণ”।

যে ফ্রান্স প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভার্দুন রনাঙ্গনে জার্মানিকে চুড়ান্ত ভাবে পরাজিত করে গর্ব ভরে পস্তর ফলকের উপর খোদাই করে লিখে দিয়েছিল “এখানে এক স্বাধীন জাতীর কাছে জার্মানীদের গর্ব খর্ব হলো”। সেই ফ্রান্স ২২বছর পর হিটলারের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হলো। ১৯৪০ সালের ২২ জুন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধ বিদ্ধস্ত এক সকাল, বাইরে জার্মান বাহিনীর মিলিটারি ব্যান্ড দিকবিদিক কাঁপিয়ে সেই ব্যান্ড তখন সুর তুলেছে “ডয়েচ ল্যান্ড উইবার আলেস্”সকল দেশের সেরা জার্মানি দীর্ঘজীবি হোক। প্যারিসের পতন ঘটেছে, ইতিহাসের কি নির্মম পরিনতি, হিটলার ঘাড়ধরে চুক্তি পত্রে সই করিয়ে নিচ্ছে, চুক্তি পত্রে ফ্রান্সের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত আছেন সেদিনের সেই ভার্দুন বিজয়ী বীর মার্শাল পেঁতা। এর পরের ইতিহাস সবার জানা, একের পর এক দেশ যখন ফ্যাসিস্ট হিটলারের কাছে আত্মসমর্পণ করছে, তখন বিশ্বমানবতাকে বাঁচাতে দুনিয়া তোলপাড় করে সারা পৃথিবীকে বাঁচাতে ছুটে গিয়েছিল সমাজতান্ত্রীক রাশিয়ার লাল ফৌজ, কমিউনিষ্টদের রক্তের বিনিময়ে সেদিন বেঁচেছিল পৃথিবী, বেঁচেছিল বিশ্বমানবতা।

আজ যখন সারা পৃথিবীর সামনে বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে করোনার মহামারী, পুঁজিবাদী দেশগুলো একে একে পরাজয় স্বীকার করে হাত তুলে নিচ্ছে, মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে ,প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ১২১টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই মারন ভাইরাস। ইতালি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো পুঁজিবাদী দেশগুলো মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছে, ভেঙে পড়েছে পুঁজিবাদী অর্থ কাঠামো। তখন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে পুঁজিবাদ নয়, বিকল্প একমাত্র সমাজতন্ত্রই। কেন বলছি এ কথা ? এই মুহূর্তে মারন ভাইরাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে যতটুকু প্রতিরোধ জারি রাখতে পেরেছে তা সমাজতান্ত্রীক দেশগুলোই করেছে। ছোট্ট দেশ কিউবা ৬৫ বছর ধরে যাকে পুঁজিবাদী দেশ গুলো অর্থনৈতিক ভাবে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। সেই কিউবা ইতালির মৃত্যু মিছিল থামাতে তাদের ৭১ জনের মেডিক্যাল টিমসহ চিকিৎসার সরঞ্জাম পাঠিয়ে। লাল ভিয়েতনাম তাদের লড়াই জারি রেখেছে, সমাজতান্ত্রিক চিন এই মারন ভাইরাসের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করে নিজেদের ছন্দে ফিরেই বিশ্বের মানুষকে বাঁচাতে যাবতীয় ঔষুধ থেকে চিকিৎসায় সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো পুঁজিবাদী দেশ নিজেরা বাঁচার জন্য সেগুলো লুট করে নিচ্ছে। আসলে এটাই পুঁজিবাদের চরিত্র, এরা নিজের টুকু ছাড়া আর কিছু ভাবে না। পুঁজিবাদ শেষ কথা নয়, ইতিহাস সাক্ষী আছে হিটলার থেকে করোনা, যখনই মানুষ বিপদে পড়েছে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে কমিউনিষ্টরাই। কমিউনিষ্টরাই ইতিহাস তৈরি করে, কমিউনিষ্টরা বুকের রক্ত দিয়ে ইতিহাস লিখতে জানে, যা পৃথিবীর ইতিহাসে চির অম্লান থেকে যায়।আর আজ আমার ভারতবর্ষে করোনা ভাইরাস এই সমাজকে ধ্বংস করছে না। বরং, একটা প্রতিবন্ধী সমাজ ব্যবস্থাকে লড়তে হচ্ছে নিষ্ঠুর ভাইরাসের বিরুদ্ধে।

বলা বাহুল্য দেশের সরকার, আমাদের রাজ্যের সরকার দৃশ্যতই দিশেহারা। অপ্রস্তুত। নেই কোন পরিকল্পনা। যুদ্ধবিমান কেনার ক্ষমতা আছে। ভেন্টিলেটর নেই। ক্ষেনণাস্ত্র কেনার টাকা আছে। স্বাস্থ্য কর্মীদের সুরক্ষা নেই। পরিযায়ী শ্রমিকদের খাবার দেবার টাকা নেই। পুষ্পবৃষ্টি করার টাকা আছে। ক্লাবকে লক্ষ টাকা দেবার পরিকল্পনা আছে। রেশন নেই। তথ্য গোপন করার পরিকল্পনা আছে। এই কঠিন মুহূর্ত আমাদের দেশের সরকারের কাছে দাবি করছে আরও বেশি কিছু। জরুরি হলো, একটি বিশ্বাসযোগ্য এবং উদ্দীপ্ত করার মতো পরিকল্পনা। নির্দিষ্ট পরিকল্পনার সঙ্গে থাকুক নির্দিষ্ট লক্ষ্য। সমস্যা শেষ হবার জন্য আমরা অপেক্ষা করতে পারি না। ধৈর্য ধরে বসে থাকতে পারি না। কঠিন পরিস্থিতি। আমাদের তার মধ্যে থেকেই কাজ করার শিক্ষা নিতে হবে। সরকারের উচিৎ পরিকল্পিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা। যা দিশা দেখাতে পারে সব শ্রেণীর মানুষকে। থাকতে হবে ভবিষ্যতের জন্য একটি পরিকল্পনা। যা হবে বিশ্বাসযোগ্য এবং যাতে থাকবে হবে অমোঘ আকর্ষণ শক্তি। কঠিন পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন বিকল্প পথ চাই। এটাই সময়ের দাবি। এই বিকল্পকে হতে হবে স্বচ্ছ এবং তাৎপর্যপূর্ণ। আগামীদিনে এই বিকল্পের বাস্তবায়ন হোক সকলের হাত ধরে। কোনও আকাশকুসুম পরিকল্পনা নয়।পরিকল্পনা হোক যা বাস্তবে পূরণ সম্ভব হবে। এ স্বপ্ন পূরণ হওয়া সম্ভব।

বলা বাহুল্য আমাদের দেশের এই করুন সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তনের চাবি আছে বামপন্থীদের হাতে। হ্যাঁ আপনি ঠিক অনুমান করেছেন ৭% ভোট পাওয়া দলের হাতেই রয়েছে এই চাবি। এই কঠিন সময়ে যখন দেশের সরকার মানুষের পাশে দাঁড়াতে সম্পুর্ন ব্যর্থ, ঠিক তখনই দেশের দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বামপন্থীরা। আমাদের দেশের অঙ্গরাজ্য কেরালা সোচ্চারে বলছে দেখে যাও বামপন্থায় বিকল্প। এই মুহূর্তে লাল ঝান্ডাই পথ দেখাচ্ছে কঠিন সময়ে মানুষের পাশে থাকার সঠিক কৌশল। হ্যাঁ বামপন্থীরাই একমাত্র পারে। কারণ তাঁদের কাছেই জানা আছে এই কঠিন সময়ের সুলুকসন্ধান। একমাত্র বিকল্প পথ। কারন তারা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে এগিয়ে চলতে জানে। তারা শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থার স্বপ্নে মশগুল।
Oh, deep in my heart.
I do believe.
We shall overcome, some day.


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।