সূপর্ণা রায়: চিন্তন নিউজ:৩রা মে :- পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির কথা শুনতে শুনতে পশ্চিমবঙ্গবাসীদের এক উচ্চ ধারণার সৃষ্টি হয়েছিল মানুষের মনে।। কিন্তু সাম্প্রতিক কালের করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে তা কতটা মিথ্যে তা বার বার প্রমাণিত হচ্ছে।। এবার প্রমাণ হলো করোনা দূর অস্ত সাধারণ চিকিৎসাও আজ বিপদের সম্মুখীন।।
জ্বলন্ত উদাহরণ, উলুবেড়িয়া হাসপাতালের একটি মর্মান্তিক ঘটনা।। সদ্য মা হয়েছিল একটা ১৯ বছরের মেয়ে __আদুরী।। হাসপাতাল থেকে তার বাড়ীতে ফোন করে জানানো হয়েছিল ২ কিলো ৭০০ গ্রাম ওজনের একটি পুত্র সন্তান হয়েছে এবং মা ও বাচ্চা দুজনের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল।। তারপর আদুরীর বাড়ীর লোক যতবার আদুরীকে দেখতে গেছে তাদের দেখতে তো দেওয়াই হয়নি উল্টে বলা হয়েছে ওরা ভালো আছে।। এইভাবে টানা ১১ দিন কেটে যাওয়ার পর আদুরীর বাবা শঙ্কর রুইদাসকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে তাঁর মেয়েকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়েছে।। প্রচুর পরিমাণে খোঁজাখুঁজি করেন শঙ্কর রুইদাস। তারপর অনেক কষ্ট করে বড়ো করা মেয়ে ১৪ দিন আগেই মারা গেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের ওয়ার্ড মাষ্টার।। এমনকি সদ্যজাত বাচ্চাটারও কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
শঙ্কর রুইদাস এক বেতের কারিগর।। খুব কষ্ট করেই একমাত্র মেয়েকে বড় করেছেন।। তাঁর স্পষ্ট অভিযোগ তাঁর মেয়ে মারা গেল আর তাঁরাই জানতে পারলেন না।। যে বাবা মেয়ের ছেলে হয়েছে শুনে এত আনন্দিত হয়েছিলেন ,, বাড়ীতে মেয়ে ও নাতিকে নিয়ে গিয়ে প্রচুর যত্ন করে রাখবেন বলে পরিকল্পনা করেছিলেন সেই বাবা মেয়েকে শেষ দেখাটাও দেখতে পেলেন না এমনকি মেয়ের বাচ্চা টাকেও খুঁজে পাচ্ছেন না তার কি অবস্থা হয় সেটা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বোঝার ক্ষমতার বাইরে।।
খবরে প্রকাশ বছর খানেক আগে আদুরীর সাথে গাড়ীর ড্রাইভার রঘু দাসের বিয়ে হয়।। শ্বশুরবাড়িতেই ছিল আদুরী ।। কিন্তু করোনা সংক্রমণের জেরে লকডাউন শুরু হয় আর সেই সময়টাতে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়ে।। তার বাবা শঙ্কর রুইদাস অনেক কষ্ট করে মেয়েকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন।। বাড়ীতে এনে তাকে উলুবেড়িয়া হাসপাতালে ভর্তি করে দেন।। হাসপাতালে থাকাকালীন সময়ে আদুরীর অল্প জ্বর আসে আর তখনই তাকে সঞ্জীবন হাসপাতালে ভর্তি করার কথা বলা হয়।। কোনরকমে একটা এম্বুলেন্স করে মেয়ে নিয়ে হাসপাতালে যান এবং সমস্ত কাগজপত্র দেখে মেয়ে কে ভর্তি করান।। পুরো সময় টা যে শঙ্কর বাবু ছিলেন মেয়ের সাথে।। তারপর হসপিটাল থেকে জানানো হয় শঙ্কর রুইদাসকে আর থাকতে হবে না ।। একটা ফোন নং নিয়ে তাঁকে বাড়ী পাঠিয়ে দেয়।। বলে রোগীর কোনো রকম প্রয়োজন হলে ফোন করে জানানো হবে।। এরপর প্রতিদিন হসপিটাল এ ফোন করে বোনের খবর নিতেন আদুরীর কাকার ছেলে সোনা রুইদাস।। ২২ তারিখ হসপিটালের পক্ষ থেকে জানানো হয় আদুরীর একটি ছেলে হয়েছে ।।আরোও বলে তারা সুস্থ আছে এবং মা ছেলের দুজনের ই করোনা ভাইরাস এর পরীক্ষা হয়েছে।। মা ও ছেলে দুজনের রিপোর্ট ই নেগেটিভ এবং ৩০ তারিখ এ ওদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে।।
এরপর ফোন করা হলে শঙ্কর বাবুকে বলা হয় যেহেতু আদুরীর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে তাই আবার তাকে উলুবেড়িয়া হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।। বাড়ীর লোক উলুবেড়িয়া হাসপাতালে গিয়ে আদুরীর খোঁজখবর শুরু করে কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।। তখন নিরুপায় হয়ে পুলিশ এর সাহায্য নিতে ওরা আদুরীর ডেথ সার্টিফিকেট ধরিয়ে দেয়।। সঞ্জীবন হাসপাতালের ডিরেক্টর শুভাশিস মিত্র জানিয়েছেন যে এমন ঘটনা ঘটা প্রায় অসম্ভব।। অনুমতি পেলে তাঁরা পুরো ঘটনার তদন্ত করবে। যারই দোষ থাকে করোনা সংক্রমণ এর আবহে এই মর্মান্তিক মৃত্যু এক বিশাল প্রশ্নের মুখে দাঁড় করালো উলুবেড়িয়া হাসপাতাল ও মমতা ব্যানার্জি সরকারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে।