রঘুনাথ ভট্টাচার্য, চিন্তন নিউজ, ১২ মে: চারিদিকে নৈরাশ্যের অন্ধকারের মধ্যে ‘হঠাৎ আলোর ঝলকানি’ দেখলে বেঁচে থাকার অনুভূতি মনে জাগে। শহর কোলকাতার বুকে এরকমই এক ইতিহাস তৈরী হচ্ছে। এটাকে ‘গণতন্ত্রের জয়যাত্রা’ বললে অতিকথন হবে না।
খবর হোলো, কোলকাতার পাভলভ হাসপাতালে ৫৪জন (৩২ জন পুরূষ ও ২২জন মহিলা) আরোগ্য-উন্মুখ রোগী এবারের সাধারণ নির্বাচনে ভোট দেবার অধিকার পেলেন। আঙুলের ভোটের কালি তাঁদের জীবনের ধোঁয়াশায় মোমের আলো হয়ে জ্বলবে।
খবরে প্রকাশ, ‘অঞ্জলি’ , স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, – এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়, হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ ও রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের সক্রিয় সহযোগিতায়, নির্বাচন কমিশন-এর সম্মতি আদায় করা সম্ভব হয়েছে। এখন মৌসুমী ঘোষ, সর্বাণী চন্দ ও অন্যান্যরা ভোটার কার্ড হাতে লাইনে দাঁড়িয়ে, হাতে কালি লাগিয়ে ভোট দেবেন।
নির্বাচন কমিশন, অঞ্জলি- যা এই নতুন ভোটারদের প্রয়োজনীয় প্রায়োগিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এই ভোটাররাও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছেন। যেমন, অন্যতম মৌসুমী মুখার্জি (৪৭), যিনি মনে করতে পারেন না, কেমন করে তিনি মুম্বাই থেকে এই শহরে এসে পৌঁছলেন। বললেন, “আমরা এতদিন আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলাম। আমার আনন্দ হচ্ছে এই ভেবে যে, আমি এবার সবার সমান হব।”
নতুন ভোটাররা এই উদ্যোগে সক্রিয় অংশ নিচ্ছেন প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে। হাওড়ার প্রাক্তন স্কুল শিক্ষিকা, অনন্যা বসু, যেমন প্রশ্ন রাখলেন, “এটা কি বিধানসভা নির্বাচন, না লোকসভার?”
টিভির ছবিতে প্রভাবিত এই নতুন ভোটাররা এখন নতুন উদ্যমে নানা রাজনৈতিক দলের গুণাগুণ নিয়ে আলোচনাতেও উদ্বুদ্ধ।
মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার চর্চায় স্বেচ্ছানিযুক্ত ও ‘ অঞ্জলি ‘র প্রতিষ্ঠাতা রত্নাবলী রায় বলেন
‘ভোট দেওয়ার অধিকার পেয়ে এই আত্মবিস্মৃত মানুষেরা সামাজিক স্বীকৃতির অনুভূতি ফিরে পাবে।’ কলকাতা পাভলভের মেডিক্যাল সুপার, ডাঃ গণেশ প্রসাদ বলেন,’ এই চিকিৎসাধীন নাগরিকদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরা আনন্দিত।’
আশা করা যায় এটা একটা দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচনা করে, নির্বাচন কমিশন একে বিধি হিসেবে সারা দেশে প্রয়োগ করবেন।